গাজা যুদ্ধ: ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিতের প্রস্তাব ইউরোপীয় কমিশনের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলি পণ্য ঘিরে বিদ্যমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি)। বুধবার ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিতের প্রস্তাব তোলা হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় কমিশনে এই প্রস্তাব উঠেছে।
তবে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এই প্রস্তাবটি পাস করার মতো পর্যাপ্ত সমর্থন নেই। এছাড়া ইসরায়েলি দুই মন্ত্রী, সহিংস ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং হামাস সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি প্যাকেজের প্রস্তাব করেছেন ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস।
বুধবার ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাও স্থগিত করবে কমিশন। তবে ইসরায়েলি সিভিল সোসাইটি ও ইয়াদ ভাশেমে ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এর ফলে ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের ভবিষ্যৎ বার্ষিক বরাদ্দ এবং চলমান প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা, যেমন ইইউ-ইসরায়েল আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রকল্পগুলোও স্থগিত থাকবে।
ইসরায়েল ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় চুক্তির ২ নম্বর অনুচ্ছেদের শর্ত লঙ্ঘন করায় ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা স্থগিতের এই প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত লঙ্ঘন করেছে। শর্ত লঙ্ঘন করায় ইইউ একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করার অধিকার রাখে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হস্তক্ষেপ, মানবিক সহায়তার ওপর অবরোধ, সামরিক অভিযান জোরদার এবং পশ্চিম তীরের তথাকথিত ই-ওয়ান এলাকায় বসতি স্থাপন পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের জেরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপের কারণে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্কটে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ‘‘গাজায় প্রতিদিন যে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে, তা অবশ্যই থামাতে হবে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশাধিকার এবং হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক সহায়তার সবচেয়ে বড় দাতা এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের দৃঢ় সমর্থক।
‘‘সাম্প্রতিক গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত, চরমপন্থী মন্ত্রী ও সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা স্থগিত করার প্রস্তাব দিচ্ছি। তবে ইসরায়েলের সিভিল সোসাইটি ও ইয়াদ ভাশেমের কাজে এর প্রভাব পড়বে না।’’
চুক্তির বাণিজ্য সম্পর্কিত মূল অংশ স্থগিত করা হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধা হারাবে ইসরায়েলি পণ্য। ফলে ইসরায়েলি পণ্যগুলোকে একই হারের শুল্ক দিতে হবে; যা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং যাদের সঙ্গে ইইউর কোনও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই।