গাজায় সেনা পাঠানোর মার্কিন প্রস্তাবে রাশিয়া-চীনের জোর আপত্তি
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে স্থিতিশীলতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন ও তাদেরকে সেখানে পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে জোর আপত্তি জানিয়েছে রাশিয়া, চীনসহ একাধিক আরব দেশ। এতে করে মার্কিন এই প্রস্তাবটি কার্যত ঝুলে গেছে।
মূলত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা না থাকায় মার্কিন এই প্রস্তাবটি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনে জাতিসংঘের অনুমোদন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা রাশিয়া, চীন এবং একাধিক আরব দেশের আপত্তির মুখে পড়েছে। তারা বলছে, গাজার প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে হবে, আর সেই ব্যবস্থায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কোনও স্থান না থাকা— এ দুটি বিষয়ই অগ্রহণযোগ্য।
জাতিসংঘে হওয়া আলোচনার বিষয়ে অবগত চার কূটনীতিকের তথ্য অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো-ক্ষমতাধারী স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীন দাবি করেছে— ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যে “বোর্ড অব পিস” গঠনের কথা বলা হয়েছে, তা পুরোপুরি তুলে দিতে হবে।
স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে যে সংশোধিত খসড়া ফিরিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ওই বোর্ডের কথা উল্লেখ করেছিল। তবে আগের খসড়ায় রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার অভাব ছিল— এ অভিযোগের জবাবে নতুন খসড়ায় ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা উল্লেখ করেছে ওয়াশিংটন।
কূটনীতিকরা বলছেন, আলোচনায় এমন শব্দচয়ন নিয়ে টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। তবে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গণহত্যার পর এই আপত্তিগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যদের অবস্থানে বড় পার্থক্য রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, প্রস্তাবটি “এখনই” পাস হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, চলমান গতি ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কানাডায় জি–৭ সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা ভালো অগ্রগতি করছি”।
গত সপ্তাহে প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম খসড়ায় বলা হয়— ২০২৭ সাল পর্যন্ত গাজায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনীকে বিস্তৃত ম্যান্ডেট দেওয়া হবে। আর এই বাহিনী এখনও প্রতিষ্ঠিত না হওয়া বোর্ড অব পিসের সঙ্গে সমন্বয় করবে।
আরব দেশগুলো বলছে, তারা ওই বাহিনীতে সৈন্য পাঠাতে আগ্রহী, তবে তার জন্য আন্তর্জাতিক অনুমোদন অপরিহার্য। এছাড়া রাশিয়া, চীন ও আলজেরিয়া প্রথম খসড়াটি প্রত্যাখ্যান করে। আর নিরাপত্তা পরিষদের মাত্র দুই সদস্য বাদে বাকিরা সংশোধনী জমা দেয়।
এই প্রস্কাব নিয়ে সবচেয়ে বড় যে দুটি প্রশ্ন সামনে এসেছে তা হলো— এতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিষ্কার রোডম্যাপ নেই এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজা থেকে ঠিক কবে সরে যাবে, তা নিয়েও কোনও নিশ্চয়তা নেই।
পরে প্রস্তাবের সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে— ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কার “নিষ্ঠার সঙ্গে” বাস্তবায়িত হলে এবং পুনর্গঠনে অগ্রগতি এলে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার “বিশ্বাসযোগ্য পথ” তৈরি হতে পারে। এতে আরও বলা হয়েছে, স্থিতিশীলতা বাহিনী গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনলে, নির্ধারিত “মানদণ্ড ও সময়সূচি” অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ছাড়বে।
এছাড়া কিছু সদস্য দেশ বোর্ড অব পিসে কারা থাকবে এবং এটি কীভাবে কাজ করবে— তা পরিষ্কার করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) জানিয়েছে, বর্তমান শর্তে তারা কোনও বাহিনীতে অংশ নেবে না, কারণ কাঠামো এখনো পরিষ্কার নয়।

