‘গণতন্ত্র পরিণত নির্বাচনতন্ত্রে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবারতন্ত্র’
নতুন আরও একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটল। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আজ শুক্রবার সকালে ২৮ দফা কর্মসূচি নিয়ে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি (বিজিপি)। তবে শিগগিরই নির্বাচনে যাচ্ছে না এ দল। আগে শুরু হবে তাদের মাঠ গোছানোর কাজ।
আত্মপ্রকাশের এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ২৮ দফার প্রণেতা বিজিপির তাত্ত্বিক নেতা ও উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্রান্তিকাল চলছে। গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে নির্বাচনতন্ত্রে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবারতন্ত্র। রাজনীতির লক্ষ্য এখন ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের অধিকারী হওয়া। এই ভ্রষ্ট রাজনীতির বিপরীতে মেহনতি মানুষের মুক্তি ও উন্নতির জন্য একটি আদর্শবাদী রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন থেকেই বিজিপির আত্মপ্রকাশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কেউই এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়নি। দেশে এখন ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রবল হয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বাড়লেও গরিব মানুষ খেতে পাচ্ছে না। মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটেনি।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, দেশে গণতন্ত্রের চর্চা শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। ভিন্নমত প্রকাশ করলেই নেমে আসছে নানা রকম নির্যাতন। দলগুলোর ভেতরেও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। সেখানেও কেউ সাহস করে সত্য কথা বলতে পারছে না। ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ ও রাজনীতিকে এ নিম্নগামী অবস্থা থেকে ওপরে তুলতে হবে। এ সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি বহুদিন ধরে কাজ করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে ২৮ দফা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। সম্মিলিতভাবে এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করলে লোকদেখানো নয়, জনগণের জীবনমানের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটবে। এ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ও বামধারার দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বহুবার আলোচনা করেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কোথাও তিনি আশাব্যঞ্জক সাড়া পাননি।
বহু দলের ভিড়ে আরও একটি রাজনৈতিক দল গঠন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা খুব কঠিন, ঝুঁকিপূর্ণ ও আর্থিকভাবে ব্যয়বহুল বলে উল্লেখ করেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। তা সত্ত্বেও তিনি সমমনা কিছু অনুরাগীর উৎসাহে এ নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি মনে করেন, ভালো জীবনযাপনের জন্য ভালো রাজনীতির প্রয়োজন। তিনি দলের পরামর্শক হিসেবে থাকবেন। যারা প্রকৃত পক্ষে মেহনতি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে চায়; তারা এ আন্দোলনে এগিয়ে আসবে। আলোচনার পর তিনি বিজিপির ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিজিপির আহ্বায়ক এম এ আলীম সরকার বলেন, দেশ এখন কিছু মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া, মুষ্টিমেয় ধনিক ছাড়া কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে। দুর্বিষহ তাদের জীবনযাত্রা। জাতি এ অবস্থার পরিত্রাণ চায়। প্রতিহিংসার রাজনৈতির বৃত্ত ভেঙে শুদ্ধ জনকল্যাণমুখী রাজনীতির লক্ষ্যে এই নতুন দল করা হয়েছে।
আলোচনা সভার পরে এম এ আলীম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এ আহ্বায়ক কমিটি এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হবে। নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধন করা বা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম অনুসরণ করেই তাঁরা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। নিবন্ধনের জন্য ১০০টি কমিটি থাকার নিয়ম করা হয়েছে। সে কারণে খুব জলদি দলের নিবন্ধন করা যাবে না। এ জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাও সম্ভব হবে না। নির্বাচনের চেয়ে এ মুহূর্তে তাঁরা ২৮ দফা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দেশে একটি শুদ্ধ রাজনীতির ধারা সৃষ্টির আন্দোলন শুরু করার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিজিপির আত্মপ্রকাশের এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবদুল বাতেন, চিকিৎসক এনামুল হক, মানবাধিকারকর্মী প্রীতি শর্মা, দলের কেন্দ্রীয় নেতা জিল্লুর রহমান, জয়নুল আবেদিন প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
দক্ষিণাঞ্চল অনলাইন ডেস্ক