‘খেতে যাওয়ার’ জন্য ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যা বলছে পুলিশ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য ও ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। যা বাংলাদেশ পুলিশের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি মোতাবেক স্পর্শকাতর সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশের দায়িত্ব, কর্ম বণ্টন এবং বিশ্রাম সংক্রান্ত বিষয়সমূহ নির্দিষ্ট স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) দ্বারা নির্ধারিত হয়। সদস্যদের খাওয়া ও বিশ্রামের সুযোগ অবশ্যই দেওয়া হয়, তবে কর্তব্যরত সবাই একইসঙ্গে তা পায় না। এ সুযোগ পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়, যাতে দায়িত্ব পালন নিরবচ্ছিন্ন থাকে। বর্ণিত কর্মকর্তারা এসওপি অনুসরণ করেননি। সেজন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পরিদর্শক (অপারেশন) ও ডিউটি অফিসারসহ তিনজনকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে ক্লোজ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তর।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ডিএমপির এক আদেশে প্রশাসনিক কারণে এসিকে ডিএমপি সদরদপ্তরে, পরিদর্শক (অপারেশনস) ও ডিউটি অফিসারকে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
যাদের ক্লোজ করা হয়েছে তারা হলেন—জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আলীম এবং ডিউটি অফিসার এসআই মাসুদুর রহমান।
ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, কোনো থানা এলাকায় ক্ষমতাচ্যুত দলের মিছিল বা সমাবেশ হলে সংশ্লিষ্ট থানাকে তাৎক্ষণিকভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর মোহাম্মদপুর এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে যান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম।
পরিদর্শনের সময় তিনি দেখতে পান, আওয়ামী লীগ যেন মিছিল না করতে পারে এটা দেখার দায়িত্ব থাকলেও তারা নিজেদের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে খাওয়া ও বিশ্রামে ব্যস্ত ছিলেন।
এ অবস্থায় অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ক্লোজের আদেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
থানা সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সকাল থেকে বিসিএস পরীক্ষার ডিউটি করেছেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের মিছিল যাতে না হয় সেটি ঠেকাতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ডিউটি করে তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে তিনি বাসায় খেতে যান এবং তার বডিগার্ড ও ড্রাইভারকে থানায় খেতে পাঠানো হয়। অন্যদিকে ৮টি পেট্রোল টিমের দুটি টিম পর্যায়ক্রমে দুপুরে খাওয়ার জন্য থানায় আসে। এ সময় আকস্মিকভাবে থানা পরিদর্শনে আসেন অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম। তিনি থানায় এসে এসি মোহাম্মদপুর জোনের গাড়ি দেখতে পান এবং ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলেন। তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাওয়া শেষ করেন। তিনটি গাড়ি থানায় দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এসি মোহাম্মদপুর জোন, পরিদর্শক অপারেশন এবং ডিউটি অফিসারকে পরিদর্শন বইতে ক্লোজ করে সংযুক্ত করেন। কিন্তু এ সময় পরিদর্শক অপারেশন থানায় ছিলেন না, তখন তিনি বাইরে ডিউটিতে ছিলেন। থানা পরিদর্শনের সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শক তদন্ত এবং এসি পেট্রোল ও থানায় ছিলেন। তবে তাদের ক্লোজ করা হয়নি। এই নিয়ে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই থানায় ছিলেন, কিন্তু কেন এই তিনজনকে ক্লোজ করা হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুর একটি অপরাধপ্রবণ এলাকা। আজ আওয়ামী লীগের মিছিল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই ঘটনায় সমস্ত ফোর্স এই এলাকায় যাতে কোনো মিছিল না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। কিন্তু এই মোহাম্মদপুর এলাকায় কোনো আওয়ামী লীগের মিছিল হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পর্যায়ক্রমে তাদের খেতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু থানায় খেতে আসায় তাদের ক্লোজ করা হয়েছে। ওই সময় তো থানায় আরও অনেক অফিসার ছিলেন, তাদের তো ক্লোজ করা হয়নি। এভাবে করলে তো চাকরি করাটাই মুশকিল। বিষয়টি এমন নয় যে সমস্ত ডিউটি পার্টি থানায় এসে আরাম-আয়েশ করছে বা খাওয়া-দাওয়া করছে। পর্যায়ক্রমে যেভাবে খেতে আসার কথা সেভাবেই আসা হয়েছিল। তবে চাকরি করি ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আমাদের মানতেই হবে। কিন্তু এভাবে হলে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়বে। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে, এখন কিছুটা মনোবল নিয়ে তারা কাজ করছে, কিন্তু এভাবে করলে তারা কাজ করতে পারবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মোহাম্মদপুরের এসি পরিদর্শক অপারেশন ও একজন সাব ইন্সপেক্টরকে প্রশাসনিক কারণে ক্লোজ করা হয়েছে।
প্রশাসনিক কারণ কী, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর বেশি আমার কিছু জানা নেই।