November 22, 2024
আঞ্চলিক

খুলনা বেতার কেন্দ্রে লুট ও অগ্নিসংযোগে শত কোটি টাকার ক্ষতি

দেশের পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বৃত্তরা হানা দেয় খুলনা বেতার কেন্দ্রে। লুট করা হয় দামি দামি মালামাল ও যন্ত্রপাতি। এরপর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ভবনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্রসহ সবকিছু। অবকাঠামো ও অন্যান্য জিনিস মিলে শতকোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয় আগুনে পুড়ে গেছে গত ৫৪ বছরের নথিপত্রসহ সংরক্ষিত অমূল্য সম্পদ। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে সম্প্রচার। কবে নাগাদ চালু হবে সেটিও নিশ্চিত নয় কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে জীবন জীবিকার সংকটে পড়েছে শিল্পী কলাকুশলীসহ অনেকে। প্রতিদিন হাজিরা দিলেও কাজ হারানোর ভয় সবসময় তাদের তাড়া করে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর খুলনা গল্লামারীতে যাত্রা শুরু করে রেডিও বাংলাদেশ খুলনা। এরপর ১৯৭৯ সালে ১ জুলাই নগরীর নূরনগর এলাকায় প্রায় পাঁচ একর জমিতে স্থানান্তরিত হয় কেন্দ্রটি, যা পরবর্তীতে খুলনা বেতার নামে রূপ পায়। যেখানে কাজ করতো দুই শতাধিক শিল্পী, কলাকুশলী, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। তিল তিল করে গড়ে তোলা সেই প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট বেলা ২টা পর কয়েকশ’ মানুষ সেখানে ঢুকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত তা-ব চালায়। এর সঙ্গে চলে ভাঙচুর আর লুটপাট। খুলে নেওয়া হয় মেশিনসহ দামি দামি যন্ত্রপাতি।

এরপর করা হয় অগ্নিসংযোগ। বেতার কেন্দ্রের মধ্যে গেলে মনে হবে এ যেন এক দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত পোড়াবাড়ি। যে দিকেই চোখ যাবে মিলবে কয়লা কিংবা ছাই। স্টুডিও ভবন, রেকর্ডিং রুম, ট্রান্সমিশন রুম, এমসিআর রুমে পোড়া গন্ধে ঢোকা দায়। আর গুদাম ঘর, কন্ট্রোল রুমসহ আশপাশের সব কিছুই নিশ্চিহ্ন। আগুনে পুড়ে গেছে হিসাব বিভাগসহ কর্মকর্তাদের কক্ষগুলো। সম্পূর্ণ কিংবা অর্ধপোড়া দীর্ঘদিনের দলিল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র যে আর কোনো কাজে আসবে না সেটা নিশ্চিন্ত সকলে। সে দিনের আক্রমণে বাদ যায়নি গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলও। আর প্রায় দুই কোটি টাকা দামের ভ্রাম্যমাণ সম্প্রচারের অভিভ্যানটি যেন এখন শুধুই স্মৃতি। যার ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে বাইরের গ্যারেজে। যন্ত্রশিল্পী শহীদুল ইসলাম রাজু বলেন, প্রিয় প্রতিষ্ঠানের এমন পরিস্থিতিতে দেখে আমরা নির্বাক হয়ে গেছি। তারপরও একে অপরের সাঙ্গে সহমর্মিতা জানাতে প্রতিদিনকার মতো বেতারে আসি। সেদিন শুধু অফিসের মালামালই পোড়েনি। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, টাকাসহ বিভিন্ন জিনিসও পুড়ে গেছে। এখন দেখি আর চোখের পানি ফেলি।

গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী শেখ আলী আহম্মেদ বলেন, কবে নাগাদ এটি সম্প্রচারে যাবে আর কবেইবা কাজ শুরু করতে পারব জানি না। এখানে অনেক শিল্পী কলাকুশলী ও টেকনিশিয়ান আছেন যাদের এটিই জীবিকার একমাত্র উৎস। কাজ হারিয়ে তারা এখন বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। জীবনের একটা পর্যায় এসে না পারছেন অন্য কোনো কাজ জোগাড় করতে, না পারছেন ছেড়ে যেতে। ফলে নিদারুণ কষ্টে আছেন এমন অনেকে।

সবিতা ব্যানার্জি নামের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো একদিন হয়তো অবকাঠামো ঠিক হয়ে যাবে। কেনা হবে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি, অথবা হবে নতুন নান্দনিক ভবন কিন্তু এমন কিছু প্রমাণপত্র আর্কাইভ করা ছিল যা আর হয়ত কখনোই ফেরত আসবে না। দীর্ঘ ৫৪ বছরের দলিলপত্র হিসাব-নিকাশ ছিল, যা আর ফেরত পাওয়া যাবে না।
আঞ্চলিক প্রকৌশলী তাজুন নিহার আক্তার বলেন, আসলে এখানে কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নাই। অনেক দামি দামি যন্ত্র ছিল। যার সঠিক মূল্য আমাদের জানা নাই। কাগজপত্রও সব পুড়ে গেছে সেজন্য প্রকৃত মূল্যও নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছেন। তবে সব কিছু আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেখান থেকেই আসবে সিদ্ধান্তগুলো। তিনি আরও বলেন, ভবনগুলো যেভাবে পুড়ে গেছে সেগুলোও ব্যবহারের উপযোগী আছে কিনা তা নিয়েও চলছে পর্যালোচনা। খুলনা বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য বলেন, সেদিনের ঘটনায় শত কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আর্কাইভে বিভিন্ন গান, নাটক, সাক্ষাৎকারসহ নানা জিনিস ছিল। সবই আজ অতীত। তারপরও কত দ্রুত স্বল্প পরিসরে সম্প্রচার শুরু করা যায় সে বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাবছেন। ইতোমধ্যে মহাপরিচালক মহোদয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। নতুন করে মালামাল কিনতে হবে।

তবে সবকিছুই একটা প্রসেসের ব্যাপার। চালু করতে গণপূর্ত বিভাগকে দুটি কক্ষ প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। আসলে কবে চালু হতে পারে এমন প্রশ্নে জবাবে আরডি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত চালুর জন্য।

শেয়ার করুন: