খুলনায় আনিছা সিদ্দিকার জামিন আবেদন নামঞ্জুর
খুলনায় নাশকতার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রবাসীর মা আনিছা সিদ্দিকার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তরিকুল ইসলাম তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এ নিয়ে দুই দফায় তাঁর জামিন নামঞ্জুর হলো।
স্বজনদের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাসী ছেলের দেওয়া স্ট্যাটাসের জেরে মা আনিছা সিদ্দিকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জামিন পেতে তাঁরা জজ আদালত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছিল। গতকালও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। জামিন নামঞ্জুরের আদেশের নকল তোলা হয়েছে। আগামী রোববার তাঁরা মহানগর দায়রা জজ আদালত জামিনের আবেদন করবেন।
আনিছা সিদ্দিকা ছাড়াও একই দিন মামলায় গ্রেপ্তার অন্য তিন আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। একই সঙ্গে জামিনের আবেদন করে আসামিপক্ষ। আদালত শুনানি শেষে জামিন ও রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে ওই তিন আসামিকে জেল গেটে এক দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও খালিশপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিবুল ইসলাম বলেন, গতকাল রিমান্ড শুনানির দিন ছিল। একই দিন জামিনেরও শুনানি হয়। খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তরিকুল ইসলামের আদালতে শুনানি হয়। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেন এবং তিন আসামিকে এক দিনের জন্য জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। পাশাপাশি চারজনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন।
পুলিশ জানায়, গত রোববার দুপুরে নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজি ফয়েজ উদ্দীন সড়কের সিদ্দিক হেলালের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে ধর্মীয় উগ্রপন্থী বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্রের কাজে ব্যবহৃত তিনটি ল্যাপটপ, পাসপোর্ট, চারটি মুঠোফোনসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। তখন আনিছাসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ছয়জনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন এসআই গোলাম মোস্তফা। খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে ওই মামলার আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর আনিছা সিদ্দিকার যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছেলে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে অভিযোগ করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় সুখরঞ্জন বালির উপস্থিতি নিয়ে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পোস্টটি নানা জায়গা থেকে শেয়ার হয়। এর জেরে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা তাঁর নানাবাড়িতে গিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন এবং তাঁর এক মামাকে মারধর করেছেন। এ সময় তাঁর মা প্রতিবাদ করলে তাঁকে (আনিছা) থানায় আটকে রেখে ও পরে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ওই নারীর বাড়ি সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায়। তাঁরা খালিশপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টি করছিলেন। তাঁর ছেলে ফেসবুকে কী পোস্ট দিয়েছেন, তা তিনি জানেন না।
আনিছার স্বামী আলমগীর শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তিনি স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি সুস্থ আছেন। কারাগারে কিছু জিনিসপত্র চেয়েছিলেন, সেগুলো দিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন আনিছা তাঁর এক ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে দেখতে ওই বাড়িতে (যে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার) গিয়েছিলেন।
আনিছার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় চাকরি করেছেন তাঁর স্বামী আলমগীর শিকদার। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। ২০১৮ সালে অবসরের পর খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় বাড়ি করে বসবাস করতে থাকেন। তাঁর বড় ছেলে একটি মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আরেকটি মেডিকেলে পড়ছেন। ছোট ছেলে তানজিলুর বুয়েট থেকে পড়ালেখা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি গবেষক। মেয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
তানজিলুর অভিযোগ করেছিলেন, অভিযানের সময় তাঁর মামা সিদ্দিক শহীদকে মারধর করে পুলিশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তানজিলুরের বাবা আলমগীর শিকদার বলেন, সিদ্দিক শহীদ তাঁর স্ত্রীর বয়সে বড়। তিনি আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। একটা অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। স্নায়ু রোগে ভুগছিলেন। অভিযানের শুরুতে তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলে তাঁর হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। ঘটনার পর তিনি আতঙ্কে আছেন। বাড়িতে আসেন না। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেখানেই আছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিবুল ইসলাম বলেন, তদন্তের অংশ হিসেবে পিও ভিজিট করতে ওই বাড়িতে একবার যাওয়া হয়েছে। হুমকির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
নিজস্ব প্রতিবেদক