November 24, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশিক্ষাশীর্ষ সংবাদ

খুলনায় বইপড়ে পুরস্কার পেলো ৩ হাজার ১২৬ জন শিক্ষার্থী

দ. প্রতিবেদক
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গত পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে সারাদেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানাবিধ উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশভিত্তিক উৎকর্ষ (বইপড়া) কার্যক্রম এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি। বর্তমানে সারাদেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১৭০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ লক্ষ ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বইপড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে খুলনা মহানগরের ৪৯টি স্কুলের প্রায় ৫,৫০০ ছাত্রছাত্রী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। এসব স্কুলের ৩ হাজার ১২৬ জন ছাত্রছাত্রী মূল্যায়নপর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তাদেরকে পুরস্কার প্রদানের জন্য শুক্রবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি, খুলনায় একটি বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই পুরস্কার বিতরণ উৎসবে ২ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে এবং ৮৯০ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক পুরস্কার গ্রহণ করে।
দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে সভাপতি ছিলেন খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ। অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আবদুস সামাদ; গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. আবদুন নূর তুষার; অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুকুল কুমার মৈত্র, গ্রামীণফোনের খুলনা রিজিওনাল হেড বুশরা মেহরিন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।
এছাড়াও অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইয়াসির আরেফিন; খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার ফারহানা নাজ, খুলনা পিটিআই এর সুপারিনটেনডেন্ট মোল্যা ফরিদ আহম্মেদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের খুলনা মহানগরের সাবেক সংগঠক হুমায়ুন কবির ববি।
সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবশনের মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরপর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন তাঁর স্বাগত বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সম্মানীত অতিথিদের অভিনন্দন জানান এবং এই বিশাল আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পন্সরের জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমাদের সকলকে বই পড়তে হবে। বই আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়। একটা জিনিসকে নানা আঙ্গিকে দেখার জন্য বই পড়তে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে জীবনকে এগিয়ে নিতে হবে । আগামীদিনকে অর্থ বহ করে তোলার জন্য বই পড়া উচিত বলে জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আবদুস সামাদ আগত সকল উপস্থিতিকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, পাঠ্য বইয়ের বাইরে সাহিত্যর বইগুলো সবসময় জীবনের জন্য প্রয়োজন । আমরা সবাই এই জীবন পাঠশালার ছাত্র-ছাত্রী মাত্র। তাই  বিশ্ব নাগরিক হবার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম বলে উল্লেখ করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা কি জানো, তোমাদের মতো লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কর্মসূচির সাথে সংযুক্ত। একটা ভালো কাজের সাথে সকল মানুষকে যুক্ত থাকতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গ্রামীণফোনের খুলনা রিজিওনাল হেড বুশরা মেহরিন তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, একজন পাঠক এক হাজার বছর জীবন অতিবাহিত করে, যারা বই পড়ে না, তারা একটি জীবন অতিবাহিত করে। তাই বই অবশ্যই পড়তে হবে। তিনি গ্রামীণফোনের অ্যাপ থেকে ডাউনলোড করে বই পড়তে উৎসাহিত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরাপাঠক পুরস্কার শিরোনামের চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। আজকে ৪৯টি স্কুলের ৩ হাজার ১২৬ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ৫৭৯ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ৮০৩ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ১৬৩০ জন এবং সেরাপাঠক পুরস্কার পেয়েছে ১১৪ জন। বিজয়ী ২ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং ৮৯০ জন শিক্ষার্থীর পুরস্কার সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকের হাতে হস্তান্তর করা হয়। কর্মসূচির নিয়মানুসারে সেরাপাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়ি একটি হিসেবে মোট ৮টি বিশেষ পুরস্কারও প্রদান করা হয়। বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১০টি মূল্যবান বইয়ের একটি করে সেট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। দিনব্যাপী এই উৎসবের এ বিশাল আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পন্সর করছে গ্রামীণফোন লিমিটেড।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন: