খুলনায় প্রেস মালিকের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে বাণিজ্যের অভিযোগ
দ. প্রতিবেদক
খুলনার গ্লোরী আর্ট প্রেস মালিক জাহিদ হাবীবের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ছাপানোর নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী। অর্থ ফেরত এবং তার এই প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দেয়া অভিযোগে জাহিদ হাবীবের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরেছেন শেখ আরাফাত হোসেন ও শিল্পী খাতুন।
জানা গেছে, গত বছর খুলনা জেলা ফ্যামিলী প্লানিং অফিসে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই নিয়োগের প্রশ্নপত্র ছাপানোর দায়িত্ব পায় খুলনার গ্লোরি আর্ট প্রেস। ওই সময় প্রেসের মালিক জাহিদ হাবীবের সাথে একটি মাধ্যমে আরাফাত ও শিল্পির পরিচয় হয়। সেই সময় জাহিদ হাবীব প্রশ্নপত্র সরবরাহের কথা বলেন এবং চাকুরি কনফার্ম করার প্রতিশ্রুতি দেন। এজন্য জাহিদ ২০ জন চাকরী প্রার্থী জোগাড় করে দেয়ার প্রস্তাব দেয় তাদের। যাদেরকে তিনি প্রশ্নপত্র সরবরাহ করবেন বিনিময়ে তাকে দেড় কোটি টাকা দিতে হবে। তারা এত লোক ও এত টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত চার জন প্রার্থীকে প্রশ্ন দেয়ার বিপরীতে ৩০ লাখ টাকা দেয়ার মৌখিক চুক্তি হয়। এজন্য অগ্রীম ১৫ লাখ টাকা নেয় জাহীদ। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন রাতে নগরীর রূপসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে প্রেসের দুই ম্যানেজার মোড়ল ও ফারুক টাকা গ্রহন করে। প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করতে বলে তারা টাকা নিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে প্রেস মালিক জাহিদ, ম্যানেজার মোড়ল ও ফারুক তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। পরীক্ষার পরদিন জাহিদের কাছে টাকা ফেরত চাইলে সে ভুক্তভোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। পুরো বিষয়টি তার আপন মামাতো ভাই মো: ইমরান হোসেন জানতো। ইমরানসহ ভুক্তভোগীরা একাধিকবার জাহীদের প্রেসে গেলে সে সকলের সাথেই খারাপ ব্যবহার করে এবং টাকা দিতে অস্বীকার করে। একই সাথে টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। জাহিদের সাথে বিভিন্ন সময় কথোপকথনের অডিও রেকর্ড রয়েছে তাদের কাছে। রেকর্ডের বিষয়টি জানতে পেরে জাহিদ মাত্র এক লাখ টাকা তার মামাতো ভাই ইমরান হোসেনের মাধ্যমে পরিশোধ করে। বাকি টাকা দিতে নানা টালবাহানা করছে। তারা এর প্রতিকার দাবি করেন অভিযোগপত্রে।
এদিকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ এবং টাকা লেনদেনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জাহীদ হাবীব পরীক্ষার আগের দিন রাতে ভুক্তভোগীদের পক্ষে তার মামাতো ভাই ইমরান হোসেনকে প্রশ্নপত্র নিতে আসতে বলেন। প্রেসের ম্যানেজার মোড়ল এবং ফারুকের হাতে টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। এরপর ইমরান তাকে রূপসা স্কুলের সামনে গিয়ে ১৫ লাখ টাকা দেয় ফারুক এবং মোড়লের হাতে। এরপর তাদের সেখানে অপেক্ষা করতে বলে চলে যায়। এছাড়াও টাকা নেয়ার বিষয়ে জাহিদের একাধিক স্বীকারোক্তি রয়েছে রেকর্ডিংয়ে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে জাহিদ হাবীবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এর সাথে জড়িত নই। কথোপকথনের রেকর্ডিংয়ের বিষয় উল্লেখ করলে তিনি বলেন ডিসি অফিসে অভিযোগ যখন দিয়েছে তখন তদন্ত করলে ঘটনা জানা যাবে।
এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ঘটনা প্রমাণিত হলে প্রেসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।