September 19, 2024
আঞ্চলিক

খুলনাতে মন্দিরে হামলা হয়নি, নির্যাতনের ঘটনা রাজনৈতিক

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট খুলনা মহানগর ও জেলার বলেন, খুলনা মহানগর ও জেলায় কোন মন্দিরে হামলার একটি ঘটনাও ঘটেনি। বেশ কিছু হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘর দখলের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সব হামলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে হয়নি। প্রতিটি ঘটনাই রাজনৈতিক। হিন্দু আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে যে অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করেছিল; তারই প্রতিশোধ হিসেবে বিক্ষুব্ধ জনতা এসব হামলা করেছে। একটি বিশেষ মহল হিন্দুদের রাজপথে নামিয়ে নিজেদের সংকট পার হতে চেষ্টা করছে

সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে প্রেসব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট খুলনা জেলার আহবায়ক ডাঃ প্রদীপ দেবনাথের সভাপতিত্বে প্রেসব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফ্রন্টের মহানগর শাখার সদস্য সচিব প্রকৌশলী সত্যানন্দ দত্ত। এসময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক জয় বৈদ্য ও প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অকুতোভয় অমূল্য জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ হঠিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করায় তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছরের স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর চরম নিষ্পেষিত বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে সারা দেশেই হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। ফলে দেশের নানা স্থানে পুলিশের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে। সরকারের পতনের পর কার্যত সারা দেশের থানাগুলো পুলিশ শুণ্য হয়ে যায়। নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে সমাজের একটি গোষ্ঠী ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়। রাজনৈতিক মতভিন্নতা কিংবা অতীতে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নয়, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট করাই যাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পর খুলনা মহানগর ও জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু সংঘাত, সহিংসতা, লুটপাট ও দখলের ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও বসতবাড়িতে হামলা লুটপাট হয়েছে। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমাজ কর্মিরা উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাত দিন এলাকায় এলাকায়, পাড়া মহল্লায় পাহারা দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে জনগনের জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় তাদের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে তাদের প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সব ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেখানে মুসলমান, হিন্দু বা খ্রিষ্টান বলে কোন ভেদাভেদ নেই।

আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের পরপরই একটি গোষ্ঠী বা মহল অন্য সব সহিংস ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে বলে পরিকল্পিত প্রপাগান্ডায় লিপ্ত হয়েছে। মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িতে লুটপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অভিযোগ আসছে নানা মিডিয়ায়। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গোষ্ঠী এসব সাজানো প্রতিবেদন ভাইরাল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

আমরা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আপনাদেরকে জানাতে চাই, খুলনা মহানগর ও জেলায় কোন মন্দিরে হামলার একটি ঘটনাও ঘটেনি। বেশ কিছু হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘের দখলের মতো ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে সে সব হামলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে হয়নি। এই ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তারা অন্যদের প্রতি যে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করেছেন, তারই প্রতিশোধ হিসেবে বিক্ষুব্ধ জনতা এসব হামলা করেছে। আমরা লক্ষ্য করবেন যে, হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় কোন এলাকায় যদি ১০ জন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন, সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হয়তো একজন। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোন মিথ্যা প্রমাণের কোন সুযোগ নেই।

উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের নেতা ব্রজেন ঢালী, সুজানা জলি, তপন কুমার ঘোষ, উজ্জ্বল কুমার সাহা, সুজিত কুমার মন্ডল, উজ্জল দাস, ইঞ্জিনিয়ার মানষ মন্ডল, রমেন রায়, অমিত মল্লিক, সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, তপন কুমার মন্ডল, দেবদাস বিশ্বাস, চন্দ্রজিৎ বৈরাগী, নিলোৎপল নিলয়, রাজু কুমার দাস, গৌড় বিশ্বাস, কৃষ্ণ বিশ্বাস, দীপ নারায়ণ, বিশ্বজিৎ গোলদার ও রতন মল্লিক প্রমুখ।

শেয়ার করুন: