খুমেকের ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, রোগীদের ভোগান্তি
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবাঞ্ছিত ঘোষিত অধিকাংশ চিকিৎসক সেবাপ্রদান থেকে বিরত থাকেন। ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আগত রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
৫ আগস্টের পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দলাদলির সূত্রপাত। একটি গ্রুপ বিগত সরকার আমলের চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানিয়ে আসছে। দাবি আদায়ে তারা হাসপাতাল এবং কলেজ চত্বরে একটি গ্রুপের বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এ সময় আরও ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল। ফলে বুধবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে হাসপাতালে আসেননি অনেক চিকিৎসক।
সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগের ২০২ নম্বর রুমের প্রীতম চক্রবর্তী, ২০৯ নম্বর রুমের ডা. হিমেল সাহা, ২০৭ নম্বর রুমের ডা. অনিরুদ্ধ সরদার, ২০৫ নম্বর রুমের ডা. শেখ তাসনুভা আলম, ২০৪ নম্বর রুমের ডা. সুব্রত কুমার মণ্ডল, ২০৩ নম্বর রুমের আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার, ২১১ নম্বর রুমের ডা. দীপ কুমার দাশ, ২১২ নম্বর রুমের আরএমও ডা. সুমন রায়, ১০৩ নম্বর রুমের ডা. তড়িৎ কান্তি ঘোষ, ৩০৮ নম্বর রুমের ডা. নিরুপম মণ্ডল, ২০৪ নম্বর রুমের ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ৪১১ নম্বর রুমের ডা. রনি দেবনাথ তালুকদার, ৪১০ নম্বর রুমের ডা. মিথুন কুমার পাল, ৪১২ নম্বর রুমের ডা. জিল্লুর রহমান তরুণ, ১০৫ নম্বর রুমের চিকিৎসক শিবেন্দু মিস্ত্রিসহ প্রায় ২০ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আন্তঃবিভাগে রেজিস্ট্রার সহকারী রেজিস্ট্রার কনসালট্যান্টসহ আরও ২১ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত; এতে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।
হাসপাতালে আসা বৃদ্ধ শাহ আলম (৮২) বলেন, শরীরে কোনো সমস্যা হলে এখানে আসি। আজ আবার এসেছিলাম চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সকাল থেকে সব ডাক্তারের রুমে তালা ঝুলতে দেখে ডাক্তার না দেখিয়ে ফিরে এসেছি।
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুমন রায় বলেন, মঙ্গলবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এসময় ডাক্তার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী এসে আমাদের ঘিরে ধরে। পরে তারা উপ-পরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। আর আমাদের প্রায় ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফারুক বলেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা আমাকে পাঠিয়েছিলেন হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখতে। এখানে গিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি সবকিছু স্বাভাবিক করতে। কিন্তু সকালে আমরা এসে ডা. মোস্তফা কামালকে খুঁজে পাইনি। চিকিৎসক না থাকায় বহির্বিভাগে অনেক রোগী এসে ফিরে গেছে। এটা কাম্য নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি অনেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাচ্ছেন। একজনকে সরিয়ে দিয়ে আরেকজনকে বসিয়ে ফয়দা লোটার চেষ্টা করছেন।