খালেক ও মধুর ভোট নিজের টাকায়, ধার-দানে আউয়াল ও সাব্বিরের
দ. প্রতিবেদক
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে যারা লড়ছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু নিজের টাকায় ভোট করার হিসাব দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল ও জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন খরচের উল্লেখ করেছেন, তার সিংহভাগ জোগান মিলবে স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া ধার-দান থেকে। কিছু সহায়তা পাচ্ছেন নিজ নিজ দলের কাছ থেকে। প্রচারে নামার আগেই প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, সেখানে নির্বাচনের খরচ ও অর্থ প্রাপ্তির উৎস সম্পর্কেও জানাতে হয়েছে। সেখানে এসব তথ্যের উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, প্রার্থীরা কোথা থেকে টাকা পাবেন, কীভাবে খরচ করবেন, সেটি সুস্পষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনের ফরমে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের পর আমরা তাদের হিসাব খতিয়ে দেখব। এছাড়া প্রচারের সময় প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলছেন কিনা এবং কেউ ব্যয়সীমা অতিক্রম করছেন কিনা তাও মনিটরিং করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, খুলনা নগরে এই ভোটে মেয়র প্রার্থীরা প্রচারণার কাজে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত খরচ হিসেবে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, নির্বাচনী কাজে তিনি তার নিজের টাকা ব্যয় করবেন। কারও কাছ থেকে ধার বা দান হিসেবে কোনো টাকা গ্রহণ করবেন না। তিনি তার খরচের সর্বোচ্চ সীমা ২০ লাখ টাকাই খরচ করবেন। মেয়র হিসেবে পাওয়া তার পারিতোষিক ও ভাতা থেকে এই পরিমাণ টাকা তার হাতে জমা আছে।
এক লাখ পোস্টার, দেড় লাখ লিফলেট ও এক লাখ হ্যান্ডবিল ছাপানো, একটি কেন্দ্রীয় ও পাঁচ থানায় পাঁচটি নির্বাচনী ক্যাম্প করা, যাতায়াত, ঘরোয়া বৈঠক, ব্যানার তৈরি, পথসভা, মাইকিং, প্রতীক তৈরি ও আপ্যায়ন প্রভৃতি খাতে এই টাকা ব্যয় করবেন তিনি। হলফনামায় সদ্যবিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রীর বছরে আয় দেখিয়েছেন ৫৯ লাখ টাকা এবং সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু জানিয়েছেন, নির্বাচনী কাজে তিনি নিজের ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন। ঠিকাদারি ব্যবসার আয় থেকে এই পরিমাণ টাকা তার হাতে জমা রয়েছে। এই টাকা তিনি ৩০ হাজার পোস্টার, ৩ লাখ লিফলেট ও ৩ লাখ হ্যান্ডবিল, ৬টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, যাতায়াত, ঘরোয়া বৈঠক, ডিজিটাল ব্যানার প্রিন্ট, পথসভা, মাইকিং, আপ্যায়ন ও পোলিং এজেন্ট নিযুক্ত প্রভৃতি খাতে ব্যয় করবেন।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, বছরে তার আয় ৯০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাড়িভাড়া থেকে আয় ১ লাখ ৮৬ হাজার এবং ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ টাকা। নগদ ও ব্যাংকে জমা মিলিয়ে তার রয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ৩ কোটি টাকার এফডিআর। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল ভোট করছেন মূলত শ্বশুর ও শ্যালকের কাছ থেকে ধার এবং দলের অনুদানের টাকায়। নিজের ব্যবসা ও শিক্ষকতার আয় থেকে ১ লাখ এবং ধার ও দানের ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন। তিনি ৫০ হাজার পোস্টার, ১ লাখ লিফলেট ও ৫০ হাজার হ্যান্ডবিল ছাপানো, ৬টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, যাতায়াত, ঘরোয়া বৈঠক, ব্যানার প্রিন্ট, পথসভা, মাইকিং, প্রতীক তৈরি, আপ্যায়ন প্রভৃতি খাতে এই টাকা ব্যয় করবেন। আব্দুল আউয়াল হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ব্যবসা ও শিক্ষকতা থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষিজমি। হাতে নগদ দেখিয়েছেন ৬ হাজার টাকা।
সবচেয়ে কম টাকা খরচ করার ঘোষণা দিয়েছেন জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন। নির্বাচনে ব্যয় তিনি ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ের ঘোষণা দিলেও তাতে নিজের টাকা মাত্র ৬৫ হাজার। বাকি পুরোটাই ধার-দান ও দলের অনুদান।
প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে জাকের পার্টির এই প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে আপিলের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়া সাব্বির জানিয়েছেন, নির্বাচনী কাজে তিনি নিজের ব্যবসার আয় থেকে ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করবেন। পাশাপাশি ভাই-বোন থেকে ধার ও দান হিসাবে পাবেন দুই লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
এছাড়া অপর এক ব্যক্তির থেকে ধার পাওয়া এক লাখ এবং জাকের পার্টির সদস্যদের দেয়া এক লক্ষ ২০ হাজার টাকাও তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন। এই টাকা তিনি ৫০ হাজার পোস্টার, ৫০ হাজার হ্যান্ডবিল, ৪টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, যাতায়াত, ডিজিটাল ব্যানার প্রিন্ট, পথসভা, মাইকিং, আপ্যায়ন ও পোলিং এজেন্ট নিযুক্ত প্রভৃতি খাতে ব্যয় করবেন।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, বছরে এসএম সাব্বিরের আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যার মধ্যে কৃষিখাত থেকে ৫০ হাজার, বাড়িভাড়া থেকে আয় ৩০ হাজার এবং ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ৩০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর রয়েছে ২ ভরি ওজনের সোনার গহনা। এছাড়া নিজের নামে ১০ কাঠা কৃষিজমি থাকার কথা তিনি হলফনামায় জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ জুন ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভোট। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার। ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে কক্ষ থাকবে এক হাজার ৭৩২টি।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়