কলকাতায় ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন আনারের মেয়ে ডরিন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিয়েছে তার পরিবার। আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাবার মরদেহ শনাক্ত করার জন্য গত মাসে ডিএনএ দিয়েছেন বলে মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। গত ১২ মে পশ্চিমবঙ্গে যান ঝিনাইদহের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলে জানান তিনি। বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আনার তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার (আনার) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিন ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে ২২ মে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে টুকরো টুকরো করে খুন করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় চার কেজি মাংস উদ্ধার করে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, গত জুলাইয়ে আনোয়ারুল আজীম আনারের পরিবার কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে তারা বাংলাদেশের সেই সময়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার জন্য কলকাতায় যেতে পারবেন না বলে জানান।
পরে গত নভেম্বরে আনারের মেয়ে ফিরদৌস মুমতাহিন ডোরিন পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডিএনএ নমুনা দেন বলে মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে কলকাতা সিআইডি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলেছে, সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা মাংসগুলো এমপি আনারের কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা প্রয়োজন। এজন্য সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানো হয়েছে।
ঘাতকরা সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্লাটে এমপি আনারের মরদেহ টুকরো টুকরো টয়লেটে ফ্ল্যাশ করেন। এছাড়া শরীরের হাড় কলকাতার ভাঙ্গরের বাগজোলা খালের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় তারা।
কলকাতা পুলিশ বলেছে, ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার জন্য আনারের স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস ও ভাই এনামুল হককে ডাকলেও কেবল তার মেয়েই কলকাতায় গিয়েছিলেন।
গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসা থেকে এমপি আনার যাত্রা শুরু করায় ডিবি পুলিশের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি। সেই মামলায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে হত্যার নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি আক্তারুজ্জামান পলাতক রয়েছেন। কলকাতা পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে।