কথায় ‘সংযত’ হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
গণমাধ্যম কিংবা সভা-সমাবেশে কথাবার্তা বলার সময় সংযত হতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সংযত ভাষায় কথা বলে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে। নানা ইস্যুতে মানুষ সরকারের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত। ফলে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের কথা বলার ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হতে হবে। এ ছাড়া তাদের সামনের দিনগুলোতে নিরাপদে চলাফেরার কথা বলেছেন তিনি। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।
প্রায় এক মাস পর গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ করে দেশব্যাপী সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারের হিসাবে এ সংখ্যা দেড়শ। কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনটি সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পেছনে সরকারের দায়িত্বশীল কারও কারও বক্তব্যকে উসকানি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি এখন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি কঠোরভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।
বৈঠকে আলোচ্যসূচির বাইরে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া আন্দোলন ও সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনার সময় সচিবরা উপস্থিত ছিলেন না। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন। তাদের অভয় দিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে—এমন বার্তাও তাদের কাছে পাঠান।
আন্দোলনকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবসহ সরকারি কর্মচারীদের নিরাপদে চলার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সামনে আরও বড় আঘাত আসতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। বিএনপি-জামায়াতকে সহিংস ঘটনার জন্য দায়ী করেছে মন্ত্রিসভা।
একজন সচিব জানান, সরকার আন্দোলন দমনে আরও কঠোর হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা এমনটি মনে করছি। তিনি আরও বলেন, হামলা-অগ্নিসংযোগে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও অধীন প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রস্তুত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দেয়। এতে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পরে সেই কর্মসূচির মধ্যেই ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক মানুষ নিহত হন। নিহতদের স্মরণে আজ (মঙ্গলবার) দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া সারা দেশের মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া করতে বলা হয়েছে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে সরকার। সে কারফিউ এখনো চলছে। তবে দিন দিন কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানা গেছে।