January 30, 2025
আন্তর্জাতিক

এশিয়ার সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শক্তিশালী সামরিক বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশের সুরক্ষাই নয়, অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বিশ্বমঞ্চে নিজের প্রভাব বিস্তারেও সামরিক শক্তি অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। আর এজন্যই বিশ্বের প্রতিটি দেশ তার সামরিক শক্তিকে প্রতিনিয়ত বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। অনেক দেশ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে শুধু এই খাতে।

বাংলাদেশও তার সামরিক খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয়। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশের মহড়া এবং প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এমনকি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে নয় মাসের দীর্ঘ একটি যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সেজন্য অনেকে জানতে চান, নতুন কোনো যুদ্ধে জড়ালে বাংলাদেশ আবারও জয়ী হবে কি না? অনেকে জানতে আগ্রহী, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা কতটা? চলুন তবে জেনে নিই বিশ্বের মধ্যে বিশেষ করে এশিয়ায় সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান কত-

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবছর একটি তালিকা প্রকাশ করে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালেও বিশ্বের শীর্ষ ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তি র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৫ তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

তবে এবার ‘এশিয়ান মিলিটারি স্ট্রেন্‌থ, ২০২৫’ শীর্ষক আলাদা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাদেশের ৪৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৭তম। প্রতিবেশী মিয়ানমারের অবস্থান বাংলাদেশের এক ধাপ নিচে। এবং বাংলাদেশের ঠিক উপরে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান।

মোট ৬০টি আলাদা আলাদা বিষয়কে বিচার-বিশ্লেষণ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সৈন্যশক্তির দিক থেকে র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। এ ছাড়া কোন দেশের কাছে কী কী অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, তালিকা তৈরির সময় সেটিও খতিয়ে দেখেছেন সমীক্ষকরা। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে এই সমীক্ষায়।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী এশিয়ায় সামরিক শক্তিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে রাশিয়া। তবে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। তালিকা অনুযায়ী, এশিয়ায় সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার পরেই রয়েছে চীনের অবস্থান। এছাড়া শুরুর দিকে আরও রয়েছে ভারত, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ। পরমানু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান বেশ কিছুটা নিচে। আর বাংলাদেশ রয়েছে ১৭তম অবস্থানে।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট সামরিক বাহিনীর আকার প্রয় ৭ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭,৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫,১০০ নৌসেনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর আকার খুব বেশি বড় না হলেও আধাসামরিক বাহিনীর দিক থেকে বাংলাদেশের বিশ্বে এক নম্বরে। বাংলাদেশের রয়েছে ৬৮লক্ষের বিশাল প্যারামিলিটারি ফোর্স। যুদ্ধ বা রাষ্ট্রের যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে তারা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারেন।

বাংলাদেশ সবসময় তার সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী এবং আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন কিনেছে। তুরস্ক থেকে আধুনিক ড্রোনও কিনেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ তার বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

শেয়ার করুন: