এমপি আনার হত্যায় গ্রেপ্তাররা আরও ৫ দিনের রিমান্ডে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আরও ৫ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম শান্ত ইসলাম মল্লিক। রিমান্ডে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও শিলাস্তি রহমান (২২)। আট দিনের রিমান্ড শেষে এদিন দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাদের হাজির করা হয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের ৮ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু। শুনানির সময় বিচারক আসামিদের কাছে জানতে চান, তারা আইনজীবী নিয়োগ করবেন কি না, আইনজীবী আছে কি না। পরে আইনজীবী নিয়োগ করবেন বলে তারা জানান। এর আগে গত ২৪ মে আসামিদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল আদালত।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে রিমান্ডে যাওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামানের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। গ্রেপ্তার তিনজনকে ওই মামলাতেই দ্বিতীয় দফারিমান্ডে নিল গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ গত ২৪ মে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংসদ সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন। ফলে লাশ উদ্ধার করা কঠিন। তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে কয়েকটি খাল, জঙ্গলে ব্যপক তল্লাশি চালিয়েও আনারের লাশের হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন। ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকের জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান হারুন অর রশীদসহ ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সঞ্জিভা গার্ডেনসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সোমবার দুপুরে সঞ্জিভা গার্ডেনস থেকে বেরিয়ে হারুন কলকাতায় সংবাদকর্মীদের বলেন, এই সেই স্থান যেখানে আমাদের সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, তার দেহ টুকরো টুকরো করার পর গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এমন পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমি আমার জীবনে দেখিনি।
পরদিন মঙ্গলবার ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ভারতে অবস্থানরত ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সঞ্জিভা গার্ডেনসে সেফটিক ট্যাংকে মাংসের টুকরা উদ্ধারের বিষয়ে কথা হয়েছে। সেখানে সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে কিছু মাংস পাওয়া গেছে। সেটা সংসদ সদস্য আনারের না অন্য কিছু, তা ডিএনএ পরীক্ষা না করে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে না। কলকাতা থেকে ফিরে ডিবির হারুনও ডিএনএ পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলছেন। খুঁজে পাওয়া মাংসের টুকরাগুলোর সঙ্গে ডিএনএ মিলিয়ে দেখতে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে ভারত নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ভিসার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে জানতে চাইলে ডিবির হারুন বলেন, শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরাতে ভারতের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় ভারতের মাধ্যমে তাকে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রানধির জেসওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, এ তদন্তে বাংলাদেশকে ‘পূর্ণ সহায়তা’ দেওয়া হবে। ভারত উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক্ষেত্রে সমন্বয় করছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আদানপ্রদান করছে। চলমান তদন্তের অংশ হিসাবে আমাদের দিক থেকে সরকার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে নানা চুক্তি বা সমঝোতায় স্বাক্ষর হলেও তা মিয়ানমারের কারণে অগ্রগতি হয়নি।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়