এখনই বাড়ানো হচ্ছে না জ্বালানি তেলের দাম
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার রেকর্ডের মধ্যে ভর্তুকি বাড়িয়ে হলেও এখনই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি, কতটুকু স্থিতিশীল রাখা যায় দামের বিষয়টা (জ্বালানির ক্ষেত্রে)। দেখা যাক, এখনও পরিস্থিতি নাগালের বাইরে না। সরকার চাচ্ছে যে, লোকসান করে হলেও সেখানে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে কতটুকু চলা যায়। এটা যদি খুব বেশি বড় হয় তাহলে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে। এখনও সেই জায়গাতে আমরা যাইনি।
ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে উত্তাপ ছড়িয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের খবরের পর থেকেই অপরিশোধিত তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। আর রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর তা ১০০ ডলার ছাড়িয়ে আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে মস্কোর তেল-গ্যাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের সম্ভাবনার খবরে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায় ৬ মার্চ।
আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের প্রতি ব্যারেলের দাম ১৩৯ ডলারে উঠে যায়। পরে তা কিছুটা কমে ১৩০ ডলারে নেমেছে। চড়া বাজারের উত্তাপ টের পাচ্ছে বাংলাদেশের মতো তেলের আমদানিনির্ভর দেশগুলো। দাম বাড়তে থাকায় ভর্তুকির কারণে লোকসান বাড়ছে দেশে তেলের আমদানির দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় তখন তাদের শুধু ডিজেলেই দৈনিক ১৩ কোটি টাকার মতো লোকসান হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বিপিসি এখন দৈনিক প্রায় ৮০ কোটি টাকা লস করছে। যদি ৮০ কোটি টাকাও থাকে তাহলে মাসে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো লোকসান। এটা বাড়ছে। এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর আলাদা প্রস্তাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা পড়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ২১ মার্চ গণশুনানি হওয়ার কথা আছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ‘ওইটা বিইআরসির বিষয়’ বলেন মন্তব্য করেন নসরুল হামিদ।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জ্বালানি আমদানিতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে। বিপিসির হিসাবে গত দুই বছরে তারা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে শুল্ক দিয়েছে। এটা এ মুহূর্তে প্রত্যাহার করলে সাশ্রয়ী মূল্যে হয়ত মানুষকে জ্বালানি দেওয়া যেতে পারে। এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী? জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ট্যাক্স ও ডিউটির বিষয়ে সরকারের কাছে আমাদের তো আবেদন আছে। বাকিটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তারা সেই জায়গাটা থেকে কতটুকু মওকুফ করবে নাকি এই জায়গায় অ্যাডজাস্ট করতে কতটুকু দেবেন? গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে প্রায় ৬৩ লাখ মেট্রিক টন, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশই ডিজেল।
পরিবহন ও সেচের মতো কাজে দৈনন্দিন ব্যবহারের পাশাপাশি দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান জ্বালানির মধ্যে রয়েছে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল। প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহে টান পড়ায় অনেক কেন্দ্রই এখন চলছে ডিজেলে।
প্রেস দ্য মিটে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ২০০ মেগাওয়াট বাড়তে থাকায় জ্বালানির চাহিদাও বাড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের হাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। কিন্তু এগুলো জ্বালানি দিয়ে চালাতে হবে, তাই না। সেখানে বিশাল অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। দুই বছর আগে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল। সেখান থেকে অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি লাগবে।
ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যেসব রাশিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশের প্রকল্পে জড়িত সেগুলোতে যুদ্ধের প্রভাব কেমন পড়তে পারে তাও জানতে চাওয়া হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের গ্যাসখাতে গ্যাজপ্রম কাজ করছে। এখন পর্যন্ত তাদের সাথে কোনও রকম সমস্যা হচ্ছে না। ঘোড়াশালে রাশিয়ান ঠিকাদাররা কাজ করছে। সেখানে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। রাশানদের কারণে এখন পর্যন্ত কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম, এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর, নির্বাহী পরিচালক রিশান নসরুল্লাহ প্রমুখ।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়