এক স্থানেই মিলছে ৬২ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার!
সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার। একসঙ্গে এত খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ অনেকের হয় না। তবে সেই সুযোগ এনে দিয়েছে ‘টেস্ট অব বাংলাদেশ ফুড ভেস্টিভ্যাল’। এখানে একই স্থানে মিলছে ৬২ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক পার্কে চার দিনব্যাপী শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। গত বছর বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড প্রথমবার একই স্থানে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন আয়োজন করেছিল।
বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী ও বাহারি স্বাদের খাবারগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্যে এই আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
রাজধানীর কালাচাঁদপুর থেকে এসেছিলেন নাজমুল ও শান্তা দম্পতি। তারা কাশমিরি আচার ঘরের আচার টেস্ট করছিলেন। এসময় তাদের সাথে কথা হয়। তারা বলছিলেন, ‘আচার তো অনেক খেয়েছি, কিন্তু এ উৎসবে না এলে বুঝতাম না আচারের স্বাদের ভেরিয়েশন।’
উৎসবে আগতদের মধ্যে বেশির ভাগই খুঁজছেন ঝাল জাতীয় খাবার। ফলে কাবাব ও ঝাল জাতীয় খাবারের স্টলগুলোতে ভিড় বেশি চোখে পড়েছে। উৎসবস্থলে বিকেল থেকে ভিড় জমে শিশু, নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী ও তরুণ-তরুণীদের। উদ্বোধনী মঞ্চের পেছনে ফাঁকা জায়গায় দেওয়া হয় গোলটেবিল। প্রতিটি টেবিলে বসার জন্য অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন।
সামুদ্রিক মাছের স্টল নিয়ে বসেছে ফুড ভিলেজ রেস্টুরেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বেশ ভীড় স্টলে। পাশেই বসেছে হেবাং নামের একটি পাহাড়ি খাবারের স্টল। স্টলে তখন তেমন ভিড় নেই, তবে কর্মীরা বেশ ব্যস্ত। সেখানে দেখা মিলল পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবার বিন্নি হোয়া পিঠা, কলাপিঠা, সান্নি পিঠা, বিন্নি চালের পায়েস, কাকড়া ভুনা, চিকেন হররু ও বিন্নি ভাত ও হাঁস ভুনা। দামও অনেকটা হাতের নাগালেই।
এই উৎসবে স্থান পেয়েছে কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, কুলফি মালাই, খুলনার চুইঝাল, শেরপুরের ছানার পায়েশ ও তুলশীমালার চাল; বিখ্যাত রাজা-চা; ছোটন মামার ফায়ার পান; হাসের মাংস, ছিটারুটি; যশোরের জামতলার সাদেক গোল্লা; বগুড়ার দই, ক্ষীরসা; কক্সবাজারের সি-ফুড; পার্বত্য চট্টগ্রামের বেম্বো চিকেন; চট্টগ্রামের মেজবান; বরিশালের রসচুসি, দুধচিতই, পাটিসাপটা, পোয়াপিঠা, বেনিপিঠা, জামাইপিঠা, তালের পিঠা, বউসুন্দরী, লবঙ্গ লতিকা, হৃদয়হরণ, ইলিশ পিঠা, ভাপাপুলি; মোরগ পোলাও, তেহারি ও বোরহানি; ফুচকা ও হালিম; ভাবের পুডিং, নাটোরের কাচাগোল্লা ও সন্দেশ; মৌলভীবাজারের মনিপুরি হাইনা চা ও খাবার; রাজশাহীর কালাইরুটি, হাসের মাংস।
এসব ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি স্থল নিয়ে বসেছেন দেশের পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কর্মীরা। তারা হোটেলটির পক্ষ থেকে তৈরিকৃত নানা খাবারের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছেন।
উৎসবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং এসএমই উদ্যোক্তারা তাদের বাহারি খাবার নিয়ে এসেছেন।
একদিকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা অন্যপাশে বসেছে গানের আসর। বিকেল থেকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে।
জানা গেছে, আগামী তিন দিনও বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পরিবেশিত হবে। উৎসবে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা, কুদ্দুস বয়াতির গান, পুঁথি পাঠ, অঞ্চলভিত্তিক খাবার নিয়ে বিতর্ক, বাউল সংগীত, কাওয়ালি, পুতুল নাচ, পাহাড়ি নৃত্য, জেলে, সাপুড়ে, মাঝিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের যৌথ নৃত্য পরিবেশনা, ব্যান্ড সংগীত, র্যাফেল ড্র, লাইভ কুকিং কম্পিটিশনের স্বাদ মিলবে।