একদিনেই ১৭ উইকেটের পতন, হারের শঙ্কায় শান্তরা
টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকালে এক ঘণ্টার সামান্য বেশি ব্যাটিং করেছিল ভারত। স্বাগতিকদের শেষ চার উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অলআউট হয় বাংলাদেশ। বড় লিড পেয়েও প্রতিপক্ষকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে আবারো ব্যাট করতে নামে টিম ইন্ডিয়া। দিন শেষে তারা হারিয়েছে ৩ উইকেট। একদিনে মোট ১৭ উইকেটের পতন দেখল চেন্নাই টেস্ট। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে হারের শঙ্কার মুখে পড়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৩৭৬ রানের জবাবে মাত্র ১৪৯ রানেই অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। সফরকারীদের চেয়ে ২২৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে এ পর্যন্ত ৩ উইকেটে ৮১ রান তুলেছে রোহিত শর্মার দল। টাইগারদের চেয়ে তারা ৩০৮ রানে এগিয়ে আছে। শুভমান গিল ৩৩ ও রিশভ পান্ট ১২ রানে নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
শুক্রবার স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করে। জাদেজা ১২৪ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৮৬ রানে বিদায় নেন। ভেঙে যায় অশ্বিনের সঙ্গে তার সপ্তম উইকেটে ১৯৯ রানের জুটি। তাসকিনের শর্ট লেন্থের বলে আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে বল তার ব্যাটের কানায় লাগে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে তাকে ফিরতে হয়।
টেল এল্ডার ব্যাটার আকাশদীপ জীবন পেলেও খুব বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৮ রানে ক্যাচ উঠালেও স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি সাকিব আল হাসান। বোলিং আক্রমণে থাকা তাসকিন তখন আফসোসে পুড়ছিলেন। যদিও আকাশদীপের ব্যাটে ১৭ রানের বেশি আসেনি। মিড অফে নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দি হন।
টাইগার পেসার তাসকিনের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন সেঞ্চুরিয়ান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ১৩৩ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১১ রানের দারুণ ইনিংস খেলে তিনি উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে শান্তর হাতে ধরা পড়েন।
তৃতীয় স্লিপে জাকির হাসানের তালুবন্দি হয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ৫ রান করা জাসপ্রিত বুমরাহ। শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ সিরাজ। ৩৩ রান যোগ করতেই শেষ ৪ উইকেট হারায় ভারত।
টেস্টে দ্বিতীয়বার ও ভারতের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ৫ উইকেট পান হাসান, খরচ করেন ৮৩ রান। সকালের সেশনে ঝলসে ওঠা তাসকিন ৫৫ রানের বিনিময়ে নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট পান নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
দেড় সেশনের বেশি ব্যাট করতে না পারা বাংলাদেশ টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে লাঞ্চ বিরতির আগেই বিপদে পড়েছিল। সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান ও মুমিনুল হকের প্রত্যেকেই বোল্ড হয়ে বাইশ গজ ছাড়েন।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই টাইগারদের উইকেটের পতন ঘটে। জাসপ্রিত বুমরাহর করা অফ স্টাম্পের উপর লেন্থ ডেলিভারিটি না খেলে ছেড়ে দেন সাদমান। এ সময় তার অফ স্টাম্প অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত ২ রানে তিনি ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন।
ব্যক্তিগত ২ রানে বেঁচে যান জাকির। পেসার মোহাম্মদ সিরাজ তার বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করলেও আম্পায়ার রড টাকার তাতে সাড়া দেননি। বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল ভেবে রিভিউ নেননি অধিনায়ক রোহিত শর্মা। হক আইতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্প বরাবর আঘাত করতো। রোহিত রিভিউ নিলে নিশ্চিতভাবেই সাজঘরে ফিরতেন জাকির।
যদিও জাকির সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। আকাশদীপের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন। ক্রিজে নেমেই আড়াআড়ি শর্ট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন মুমিনুল হক। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন আকাশদীপ।
লাঞ্চ বিরতির পর মোহাম্মদ সিরাজের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ৩০ বলে ৩ চারে ২০ রান করা নাজমুল হোসেন শান্তর সহজ ক্যাচ নেন বিরাট কোহলি। একইভাবে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে লোকেশ রাহুলের তালুবন্দি হন ৮ রান করা মুশফিক।
স্কোরবোর্ডে ৪০ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ফলোঅনের শঙ্কায় পড়ে। ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যান সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব জুটির পর তারাও ড্রেসিং রুমে ফিরে যান।
রবীন্দ্র জাদেজার বলে সুইপ শত খেলা লিটন লং লেগে বদলি ফিল্ডার ধ্রুব জুরেলের ক্যাচে পরিণত হন। আউট হওয়ার আগে তিনি ৪২ বলে ৩ চারে ২২ রান করেন। সাকিবের সঙ্গে গড়েন ৫১ রানের জুটি। সাকিবের উইকেটও তুলে নেন জাদেজা। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন। বল তার ব্যাটে হালকা লাগার পর বুটে আঘাত হেনে রিশভ পান্টের গ্লাভসে চলে যায়। টিভি আম্পায়ার রিপ্লে দেখে আউটের সংকেত দেন।
চা বিরতির আগে জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে বল তুলে দেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা। চতুর্থ স্টাম্প বরাবর করা লেন্থ ডেলিভারিতে খোঁচা মারেন ৯ রান করা হাসান। দ্বিতীয় স্লিপে থাকা বিরাট কোহলি সহজ ক্যাচ নেন। বুমরাহর ইয়র্কার বল সামলাতে পারেননি তাসকিন আহমেদ, ১১ রান করে বোল্ড হন। শেষ ব্যাটার হিসেবে সিরাজের বলে বোল্ড হন ১৩ রান করা নাহিদ রানা। মেহেদী হাসান মিরাজ ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতের পক্ষে ৫০ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন বুমরাহ। দুটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ সিরাজ, আকাশদীপ ও জাদেজা।
দ্বিতীয় ইনিংসে নামা ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। তাসকিন আহমেদের শর্ট লেন্থের বল স্কয়ার অঞ্চলে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন ৫ রান করা রোহিত শর্মা। ঠিকঠাক শর্ট খেলতে না পারায় বল ভারতীয় অধিনায়কের ব্যাটের কোণায় লেগে স্লিপে জাকিরের হাতে চলে যায়।
বল হাতে নিয়েই চতুর্থ বলে উইকেটের দেখা পেলেন নাহিদ রানা। প্রথম ইনিংসে ফিফটি পাওয়া যশস্বী জয়সওয়াল ব্যক্তিগত ১০ রানে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দী হয়ে মাঠ ছাড়েন। প্রথম ইনিংসের পর আবারো ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন বিরাট কোহলি। টিম ইন্ডিয়ার সাবেক অধিনায়ক ১৭ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে বাইশ গজ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে একটি করে উইকেট পান তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।