November 24, 2024
লেটেস্টশিক্ষা

একজন জহুরুল হক ও কতিপয় প্রশ্ন

অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় গাড়ির অপেক্ষা করছি। আমার পাশে রোড ইন্ডিকেটরে হেলান দিয়ে একজন ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন। ভদ্রলোককে বললাম, ‘দেখুন যেভাবে ইজিবাইকের ড্রাইভারগণ গাড়ি ভেড়ান তাতে আমাদের বাসের ড্রাইভারদের এখানে গাড়ি দাঁড় করাতে অসুবিধা হয়। এ বিষয়ে আপনার সহযোগীতা দরকার’।

বুকের কাছে যে নেইমপ্লেট, তাতে তাঁর নাম লেখা ‘জহুরুল’। জহুরুল নামের ট্রাফিক পুলিশ ভদ্রলোক আমার কথা শুনলেন মনযোগসহকারে। শুনে কিছুটা হাসলেন।

অভদ্র মনে হচ্ছিলো না তাঁকে। তাই তাঁর হাসিতে কিছুটা অবাক হলাম। একটু পর, একখানা ইজিবাইক সেখানে এসে দাঁড়ালে, তিনি তাঁর ড্রাইভারকে ঈশারা করে কাছে ডাকলেন। ড্রাইভার এগিয়ে এলেন। জহুরুল আগন্তুক ড্রাইভারকে বললেন, ‘পরনের গেঞ্জি ওঠা’

ইজিবাইকের ড্রাইভার কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তিনি একবার জহুরুলের দিকে আর একবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন। বিরক্ত ট্রাফিক পুলিশ জহুরুল তখন নিজেই ড্রাইভারের গেঞ্জি ওপরে তুললেন। তারপর পেটের কাছে আলতো করে একটি চিমটি কেটে বললেন, ‘ব্যথা লাগে?’

ড্রাইভার বেশ কিছুটা চমকে পিছনে সরে গিয়ে বললেন, ‘ব্যাথা লাগবে কেন, আপনি তো ব্যথা দেননি’। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিলো তিনি তখনও অপ্রস্তুত।
ট্রাফিক পুলিশ জহুরুল বললেন, ‘তোর অনুভূতিতো ঠিকই আছে। কোনটা ব্যাথা আর কোনটা ব্যথা না, সেটাতো ভালই বুঝতে পারছিস। তাহলে এটা বুঝিস না যে, এখানে গাড়ি দাঁড় করালে মানুষের অসুবিধা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলি দাঁড়াতে পারে না। ভিড় হয়ে যায়’।

তার এই কথার প্রতিউত্তরে ড্রাইভার বললেন, ‘আর দাঁড় করাবো না’।

আমি তাঁকে ধন্যবাদ দিতে যাবো, এমন সময় একজন প্রতিবন্ধি মানুষ হুইল চেয়ারে এসে নিরালার এক নম্বর রোডে দাঁড়ালে তিনি সাথে সাথে সেদিকে ছুটে গেলেন। ছুটে গিয়ে সেই হুইলচেয়ারে বসা মানুষটিকে রাস্তা পার করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ভদ্রলোক রাস্তা পার করানোর কাজটি শেষ করে ফিরে এলে, আমি তঁর ছবি তুলতে গেলাম। সাথে সাথে তিনি ‘করেন কি, করেন কি?’ বলে আমাকে ছবি তুলতে নিষেধ করলেন। আমি কী একটা বলতে যাচ্ছিলাম, আমাকে থামিয়ে হেসে বললেন, ‘আমি কি করেছি যে, আপনি আমার ছবি তুলবেন?

এবার আমার অপ্রস্তুত হবার পালা। তিনি বললেন, ‘আমি যা করেছি সেটা আমার দায়িত্ব। এদেশে লেখা পড়া জানে এমন লক্ষ লক্ষ মানুষের কোনো কর্ম নেই। আমার একটা আছে। আমি ভাগ্যবান। আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন সবসময় দায়িত্বশীল থাকি।

গাড়িতে করে অফিসে আসার পথে, জহুরুলের কথাগুলি কানে বাঁজছিল। ‘আমি কী করেছি যে আমার ছবি তুলবেন’ ‘আমি যা করেছি সেটা তো আমার দায়িত্ব’ ইত্যাদি।

বহু মানুষ আছি, আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি না। বাংলাদেশের প্রতিটি কর্মজীবি মানুষ আমরা কবে তাঁরমত করে বুঝবো? বাংলাদেশের অফিসে অফিসে আজ অসংখ্য জহুরুল প্রয়োজন।

শেয়ার করুন: