December 3, 2024
আঞ্চলিকজাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’

৮-১২ জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে উপকূলের মানুষ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূলে আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূইয়া রবিবার রাত সোয়া ৮টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।
আবহাওয়াবিদ শামীম জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
তিনি বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণপশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। আরো উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।


আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ রবিবার দুপুরেই উপকূল স্পর্শ করেছিল। সন্ধ্যা ৬টার পর এর কেন্দ্রভাগ উপকূলে উঠে আসতে শুরু করে। মোংলা ও পায়রা বন্দরকে আগের মতোই ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে। আর উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সাবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারি (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সারা দেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার বিমানবন্দর ও বরিশাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সব ধরনের কাজ বন্ধ। বন্দরের জেটি থেকে সব জাহাজকে পাঠানো হচ্ছে সাগরে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৮ হাজার ৪৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত; আশ্রয় নিয়েছেন ৫২ হাজার ৪৪৬ জন মানুষ। উপকূলীয় জেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব থেকে দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষকে বাঁচাতে আট থেকে নয় হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মুহিবুর রহমান। রবিবার দুপুরে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, ঝড় মোকাবেলার পরে রেসকিউ করার জন্য টিমগুলো প্রস্তুত রয়েছে, আমাদের সেনাবাহিনীর টিম প্রস্তত রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস মোকাবিলা করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর লোকজন সমস্ত সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। এক কথায় আমরা আরও সক্ষমতার সাথে প্রস্তুত রয়েছি। কালক্ষেপণ না করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ৮-৯ হাজার নিরাপদ আশ্রয়স্থল প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি ঝড় মোকাবেলার পরে রেসকিউ করার জন্য টিম প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার পাশাপাশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবার। ঝড়ের পরের উদ্ধার তৎপরতার জন্য মেডিকেল টিম ও স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত আছেন।
যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর ১৬১৬৩ অথবা কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল-এর জরুরি মোবাইল নম্বর ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯-এ ফোন করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন: