ইরানে যেভাবে পাল্টা হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল
ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেহরানের রাস্তায় লোকজন উৎসব করছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান বড় ভুল করেছে এবং এর জন্য দেশটিকে মূল্য দিতে হবে।
ইসরায়েলের সহযোগীরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েলের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ঘটনায় বুধবার বৈঠকে বসবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
ইরান বলছে, ইসরায়েল যদি পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে ইসরায়েলের সব অবকাঠামোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান গত এপ্রিলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা দেশটিকে যেভাবে ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়েছিল, এবার তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সাবেক ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা আভি মেলামেদ বলেন, ইরানের হামলা হলো ইসরায়েলকে বড় ধরনের পাল্টা হামলার জন্য উসকানি দেওয়া… আমরা ইরানি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে উল্লেখযোগ্য ও তাৎক্ষণিক ইসরায়েলি জবাব দেখতে পাবো।
কেমন হতে পারে ইসরায়েলের প্রতিশোধ?
ইরানে হামলার জন্য দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনা ইসরায়েলের হাতে থাকবে। এর প্রতিরক্ষা প্রধান এখন পর্যালোচনা করে দেখবেন কখন ও কীভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটিতে আঘাত করবেন।
এর মধ্যে অবশ্যম্ভাবী সামরিক লক্ষ্যবস্তু হবে স্থলভাগে, যেখান থেকে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।
সুতরাং ফায়ারিংয়ের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র যেখানে রাখা হয়েছে শুধু সেই জায়গা নয়, বরং কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, এমনকি রিফুয়েলিং সেন্টারগুলোও এর আওতায় থাকবে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিয়েছে যারা এবং যারা এটি পরিচালিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ইরানের অভ্যন্তরেই গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে পারে ইসরায়েল। যদি দেশটি আরও বেশি কিছু করতে চায় তাহলে তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো টার্গেট করতে পারে।
যে পথেই আগাক ইসরায়েল, এতেও ইরানের পাল্টা হামলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে এবং এর মাধ্যমে দেশ দুটি হামলা ও প্রতিশোধে চিরস্থায়ী এক চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়বে।
এবার আর রাখঢাক নয়
গত এপ্রিলে ইসরায়েল যেভাবে ইরানের হামলার জবাব দিয়েছিল, তার চেয়ে এবার আরও অনেক বেশি শক্তি নিয়ে আক্রমণ করতে প্রলুব্ধ হবে দেশটি।
ওই সময় ইসরায়েলকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত রাখতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার পর তিনশ’র মতো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইসরায়েলকে টার্গেট করে ছুড়েছিল ইরান।
শেষ পর্যায়ে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ছোট কিন্তু প্রতীকী হামলা করেছিল। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কম। কিন্তু ইরানকে তারা দেখিয়েছিল, চাইলে ইসরায়েলি বাহিনী কোথায় পৌঁছাতে পারে।
এবার হয়তো এর থেকে ভিন্ন হবে পরিস্থিতি। ইরান যেমন মনে করেছে, জুলাইয়ে তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও কয়েকদিন আগে হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ হত্যার জবাব দিতে হবে, ইসরায়েলও তেমনি ইরানের সরাসরি আক্রমণ নিয়ে চুপ করে থাকবে না।
সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা থেকে শুরু করে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যেখান থেকে হয়েছে কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রাখা ও যেখান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে, এমনকি রেভল্যুশনারি গার্ডের ঘাঁটি পর্যন্ত।