ইটের আঘাতে শুভকে একাই খুন করে প্রধান আসামী সজল : আদালতে স্বীকারোক্তি
দ. প্রতিবেদক
খুলনার সোনাডাঙ্গায় স্কুলছাত্র শুভ হাওলাদার (১১) হত্যা মামলায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে মামলার প্রধান আসামী সজল ব্যাপারী। মঙ্গলবার জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামী সজল সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা মুনসুর খাঁর বস্তির ভাড়াটিয়া নুর মোহাম্মদ ব্যাপারীর ছেলে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই সুকান্ত দাস দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আসামী সজলের জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, ‘নিহত শুভ হাওলাদারকে প্রায়ই তাকে হিজড়া বলে ডাকতো সজল। এ নিয়ে শুভ প্রতিবাদ করত। এর প্রেক্ষিতে শুভকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় সজল। রবিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সজল বাবার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা এলাকার একটি হোটেলে নাস্তা করে। পরে বালুর মাঠের দিকে খেলতে যায়। এসময় সজল ব্যাপারী ওই স্থানে হাজির হয়ে শুভকে হিজড়া বলে ডাকতে থাকে। এতে শুভ ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি সজলকে গালিগালাজ করতে থাকে। পরে সজল ক্ষিপ্ত হয়ে শুভকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে লাথি মারে। এরপর ইট দিয়ে আঘাত করে। ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে বলে সজল তাকে ইট দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। শুভর মৃত্যুর পর সেখান থেকে বের হয়ে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের মধ্যে এসেও ঘুরে বেড়ায়। পরবর্তীতে পুলিশ আসলে পালিয়ে গোপালগঞ্জ গিয়ে আত্মগোপন করে। ঘটনার দিন ঘর থেকে বিকেলে সজলের রক্তমাখা প্যান্ট ও গেঞ্জি উদ্ধার করে পুলিশ।’
তিনি আরও জানান, ‘পরবর্তীতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। সোমবার রাতে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরে মধুপুর গুচ্ছগ্রামে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সজল নদীতে ঝাঁপ দেয়। পুলিশও সাথে সাথে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তাকে আটক করে। থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দিতে চাইলে তাকে সকালে আদালতে হাজির করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় সজল ছাড়া আর কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না বলে আসামী জবানবন্দিতে উল্লেখ করে। এ মামলায় আরও দু’জন আসামী রাকিব ও জাহিদকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের তিনজনকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব-৬ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সোমবার দিবাগত রাতে শুভ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী মোঃ রাকিবকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন মুজগুন্নী বাস্তহারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আটক রাকিব বয়রা ক্রস রোড ফিরোজ সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ শাহিনের ছেলে। পরে তাকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ মামলার আরেক আসামী মোঃ জাহিদকেও গ্রেফতার করে র্যাব। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই এলাকার ইউসুফ ব্যাপারীর ছেলে। এ মামলার এখন পর্যন্ত গ্রেফতার ৩ আসামীর মধ্যে ২ জনকেই র্যাব গ্রেফতার করেছে। আর প্রধান আসামীকে পুলিশ গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে।
র্যাব-৬ আরও জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ২য় ফেজের ১৪নং রোডের একটি সীমানা প্রাচীরের পাশে ঝোপের মধ্যে একটি লাশ স্থানীয় লোকজন দেখতে পায়। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমের খালা নাজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে তার বোনের সন্তান শুভ’র লাশ বলে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মা ঝুমুর বেগম বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডটি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বহুল আলোচিত এবং চাঞ্চল্যকর হত্যার পর থেকেই র্যাব-৬ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্য গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রাখে ও বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এবং এজাহারভুক্ত ২ আসামীকে গ্রেফতার করে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ