July 3, 2025
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

ইউনূস-রুবিও’র ফোনালাপে বাংলাদেশে শিগগিরই নির্বাচন করার কথা এসেছে

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সেই ফোনালাপে শিগগিরই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা এসেছে।

ইউনূস-রুবিও’র ফোনালাপ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তৌহিদ হোসেন জানান, তারা খুব চমৎকার পরিবেশে কথা বলেছেন। তখন আমি সামনে বসা ছিলাম। সেখানে সংস্কার কার্যক্রমে আমেরিকার সমর্থনের কথা বলেছেন এবং আলাপে উঠে এসেছে যথা শিগগির সম্ভব নির্বাচন করার বিষয়টি।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ব‌লেন, মিশন চালুর বিষয়ে চার দফা খসড়া আদান-প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে চুক্তির খসড়াটি বিবেচনা করছে জাতিসংঘ। এরপর কোনো পরিবর্তন না হলে দুপক্ষ এটি সই করবে। তিন বছরের জন্য অফিস খোলার বিষয়ে দুপক্ষ সম্মত। তিন বছর পরে নবায়ন না হলে অফিস থাকবে না।

খসড়া কত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে— জানতে চাইলে উপ‌দেষ্টা বলেন, এ ধরনের কোনো টাইমফ্রেম নেই। এরই মধ্যে দুপক্ষের চারবার খসড়া চালাচালি হয়েছে। এরপর আমরা সেটিকে পরিবর্তন করেছি। তারা আবার কিছু পরিবর্তনের কথা বলেছে। কাছাকাছি যাওয়ার পরে অন্যান্য যে প্রক্রিয়া আছে, সেটি শুরু করেছি। তবে সেই পর্যায়ে তাদের দেওয়া কিছু পরিবর্তন আছে এবং অনেকটা আমরা সম্মত হয়েছি। বাকি পরিবর্তনগুলো যদি তারা গ্রহণ করে এবং বলে যে আবার পরিবর্তন কর, তবে আমরা দেখব সেটি পরিবর্তন করা যাবে কি না।

শিগগিরই নির্বাচন করার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন কি না, প্রশ্ন রাখা হয় উপদেষ্টার কাছে। জবাবে তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। তিনি বলেন, দু’পক্ষের  কথা হচ্ছিল আন্তরিক পরিবেশে। তার মধ্যে এ কথাগুলো উঠে এসেছে। নির্বাচন সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে এবং সংস্কার কার্যক্রমের ব্যাপারে সমর্থনের কথা বলেছে। তখন তাদের জানানো হয়েছে, যথা শিগগির সম্ভব নির্বাচন করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আলোচনা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আজকে ওয়াশিংটনে বৈঠক হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখানে গেছেন। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সেখানে আছেন। কাজেই আমরা আশা করব যে একটি সমাধানে আমরা দুপক্ষ পৌঁছাতে পারব এবং বাণিজ্যে তেমন প্রভাব পড়বে না।

মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি।

গত সোমবার ইউনূস-রুবিও ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতেও অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই ফোনালাপ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রায় ১৫ মিনিটব্যাপী ফোনালাপ ছিল উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক, যা দুই দেশের মধ্যকার দৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্প্রীতির প্রতিফলন। আলোচনার সময় উভয় নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, যার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক উত্তরণের রূপরেখা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচি এবং আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগকে সমর্থন জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য এবং রেমিট্যান্সের শীর্ষ উৎস। এর পরিপ্রেক্ষিতে উভয় নেতা শিগগিরই শুল্ক বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে।

শেয়ার করুন: