April 20, 2025
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে যুদ্ধ অবসানের সম্ভাবনা ‘আপাতত’ নেই : ক্রেমলিন

গত প্রায় ৩ বছর ধরে ইউক্রেনে যে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রুশ সেনারা, তা অবসানের সম্ভাবনা আপাতত নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ তথ্য জানিয়েছেন।

সোমবার রাশিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা রিয়া নভোস্তি পেসকভের একটি সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, নিকট ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না।

উত্তরে পেসকভ বলেন, “না, আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কয়েক দিন আগে বলেছেন যে কিয়েভের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য মস্কো প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য রাশিয়া কোনো পূর্বশর্ত রাখছে না।”

“কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউক্রেন এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এমনকি তারা শান্তি আলোচনার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিংবা প্রস্তুতি নিচ্ছে— এমন কোনো তথ্যও আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। তাই যেহেতু কিয়েভ এখনও প্রস্তুত নয়— ইউক্রেনে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান চলবে।”

ইউক্রেনের রুশ বংশোদ্ভূত যোদ্ধাদের সহায়তায় ২০১৫ সালে কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া। পরে সেখানে একটি গণভোট হয়, সেই ভোটে ক্রিমিয়ার অধিকাংশ বাসিন্দা জানান যে তারা রুশ ভূখণ্ডের অংশ ও রাশিয়ার নাগরিক হতে আগ্রহী।

এরপর ২০১৭ সালে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে মস্কোর সঙ্গে একটি চুক্তি সাক্ষর করে কিয়েভ। ‘মিনস্ক চুক্তি’ নামে পরিচিত সেই চুক্তির সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে ইউক্রেনেরি স্বীকৃতি দেওয়া। চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সেই শর্ত পূরনের প্রতিশ্রুতি দেয় ইউক্রেন।

কিন্তু মিনস্ক চুক্তির প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেই শর্ত পূরণ না করা এবং ক্রিমিয়াকে উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের নেৃতত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কিয়েভের ব্যাপকমাত্রায় তদ্বির রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। সেই টানাপোড়েনেরই এক পর্যায়ে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য রুশ সেনাদের নির্দেশ দেন পুতিন। গত প্রায় তিন বছরের অভিযানে ইতোমধ্যে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া— এই চার প্রদেশের দখল নিয়েছে রাশিয়া। এই চার প্রদেশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশ।

২০২৩ সালে অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা শান্তি সংলাপ শুরুর জন্য মস্কোকে কিছু শর্ত দিয়েছিলেন। সেসব শর্ত হলো— ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক এবং খেরসনকে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড স্বীকৃতি দেওয়া, সামরিক অভিযানের ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইউক্রেনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং রুশ সেনাবাহিনীর বিচারের জন্য যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়া যদি এসব শর্তে রাজি হয়, তাহলে শান্তি সংলাপে বসবে ইউক্রেন।

কিন্তু জেলেনস্কি ও তার মিত্রদের এসব শর্তকে অগ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবতা বিবর্জিত উল্লেখ করে উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো।

শেয়ার করুন: