ইংল্যান্ডকে লজ্জায় ডুবিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড জয়
সাউথ আফ্রিকার ইনিংসের শেষটা ছিল কেবলই হেনরিখ ক্লাসেন এবং মার্কো জেনসেনময়। তাদের দুজনের ঝড়ে প্রোটিয়ারা পেয়েছিল ৩৯৯ রানের পাহাড়সম পুঁজি। সাউথ আফ্রিকার ঝড়ের জবাব দিতে নেমে রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে হতো ইংল্যান্ড। লুঙ্গি এনগিদি, জেনসেনরা অবশ্য ইংলিশ ব্যাটারদের সেই সুযোগটা দেননি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ইংল্যান্ডকে ২২৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে এক ম্যাচ পর জয়ে ফিরল সাউথ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের তালিকায় আট নম্বরে জায়গা পেয়েছে ইংলিশদের লজ্জার এই হার।
৪০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। প্রথম থেকেই দেখেশুনে খেলেন তারা। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তাদের জুটি। ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই ওপেনিং জুটি ভাঙেন লুঙ্গি এনগিডি। তার এক্সট্রা বাউন্স বলে ডুসেনের তালুবন্দী হন বেয়ারস্টো। সাজঘরে ফেরার আগে ১০ করেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট করতে আসে জো রুটও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। দলীয় ২৩ রানে জানসেনের বলে মিলারকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটার। এরপর ইংলিশ শিবিরে ব্যাটিংয়ে চলে আসা যাবার মিছিল। ৪৫ রানের ভিতর হারিয়ে বসে আরও চার উইকেট। মালান ৬, বেন স্টোক ৫, জস বাটলার ১৫ ও হ্যারি ব্রুক ১৭ করে সাজঘরে ফিরলে ম্যাচ থেকে এক প্রকার ছিটকে যায় ইংল্যান্ড।
পরে ক্রিস উড ও গাস অ্যাটকিনসনের ৭০ রানের জুটি হারের ব্যবধান কমিয়েছে ইংলিশদের। ম্যাচের ২৩ ওভারের গাস অ্যাটকিনসনের স্ট্যাম্প ভাঙেন কেশব মহারাজ। এতে ইংলিশদের ইনিংস থেমে যায় ১৭০ রানে। প্রোটিয়াদের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন জেরার্ল্ড কোয়েৎজে।
এর আগে প্রোটিয়াদের হয়ে দলটির হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন কুইন্টন ডি কক ও রেজা হেনড্রিকস। তবে শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। প্রথম ওভারেই রিস টপলির বলে জস বাটলারের তালুবন্দী হন ডি কক । শূন্য রানে সাজঘরে ফেরনে তিনি। এরপর ক্রিজে আসেন রাসি ফন ডার ডুসেন। মাঠে নেমে ইংলিশ বোলারদের দেখে শুনে খেলে ফিফটি পূর্ণ করে তিনি। একই ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অর্ধ শতক তুলে নেন হেনড্রিকস।
অবশ্য ফিফটির ইনিংস লম্বা করতে পারেননি ডুসেন। আদিল রশিদের বলে জনি বেয়ারস্টোর তালুবন্দী হন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৬০ রান করেন এ ব্যাটার। পরে বাইশ গজে আসেন প্রোটিয়া দলপতি এইডেন মার্করাম। তার সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়েন রেজা। ম্যাচের ২৬তম ওভারে আদিল রশিদের বলে বোল্ড হন রেজা। আউট হওয়ার আগে ৮৫ রান করেন এ ওপেনার।
রেজার বিদায়ে ক্রিজে আসেন হেনরিখ ক্লাসেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নিতে থাকেন মার্করাম। তবে ৬৯ রানের জুটি গড়ে প্রোট্রিয়া অধিনায়ক আউট হলে ভাঙে এই দুই জনের পার্টনারশিপ। ৪৪ বলে ৪২ করেন তিনি। এরপর উইকেটে আসেন মিলার। তবে নামের পাশে ৫ রান যোগ করতেই দলীয় ২৪৩ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
ষষ্ট উইকেটে ব্যাটে আসেন মার্কো জানসেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে ইংলিশ বোলারদের ওপর তান্ডব চালাতে থাকে ক্লাসেন। দ্রুত রান তুলতে থাকা এই ব্যাটার শতক তুলেনেন ৬১ বলে। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুত শতক করার তালিকায় ষষ্ট স্থানে নিজের জায়গা করে নেন ক্লাসেন। এদিকে ক্লাসনের শতকের পর ইংলিশ বোলারদের ওপর চড়া হতে থাকেন জানসেন। চার-ছয়ের তান্ডবে ৩৫ বলে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন তিনি।
তবে দলীয় ৩৯৪ রানে ক্লাসেন আউট হলে ভাঙে ১৫১ রানের জুটি। সাজঘরে ফেরার আগে ১০৯ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন মার্কো জানসেন। এতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে প্রোটিয়াদের ইনিংস থামে ৩৯৯ রানে। এরমধ্যে দিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার রেকর্ড গড়েন আফ্রিকা। এর আগে ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের ৩৯৮ রান ছিল সর্বোচ্চ।