September 19, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

আ.লীগকে মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে আবারো ‘ঝামেলা’ করলে আওয়ামী লীগের পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ইতিহাস বড় নির্মম, আল্লাহতায়ালার বিচার বড় নির্মম… ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার (শেখ হাসিনার) মুখ দিয়ে প্রতিশোধে জিজ্ঞাসা স্পষ্ট হয়েছিল। আল্লাহর কী হুকুম দেখেন, সেই তাকেই পালিয়ে যেতে হলো আবার সেই জায়গায় সেখানে তার গোঁড়া পোতা আছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সেজন্য আওয়ামী লীগারদের বলছি, এখনো সময় আছে আপনারা আর ঝামেলা কইরেন না। কারণ ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আজকে (১৫ আগস্ট) তো চেষ্টা করেছিলেন যে, আপনারা যাবেন, ৩২ নং এ গিয়ে ফুল দেবেন। কারও তো আপত্তি ছিল না। কিন্তু ছাত্ররা তা হতে দেননি… হতে দেননি কেনো… এই মানুষটাকে কেউ দেখতে চায় না। খুনি হাসিনার চেহারা কেউ আর দেখতে চায় না। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সৃদৃঢ় করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসসচিব।

নয়া পল্টনে বিএনপির উদ্যোগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি হয়। কাকরাইল থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশে রূপ নেয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সমাবেশের ব্যানারে লেখা আছে, এই যে গণহত্যা, হাসিনা যে খুনি ও তার দোসরদের আমরা বিচার চাই। বিচার আল্লাহ‘তালা করছে, আরও করবে। আমরা বিচার চাই এই সরকার কাছে… যারা অন্তর্বতীকালীন সরকার যাদের ওপরে জনগণ আস্থা দিয়েছে… একটু স্বস্তি ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দেবে… একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দেবে সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে। আমরা সেটাই চাই।

তিনি বলেন, আমরা চাই, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হোক। আমরা যৌক্তিক সময়ও দিতে চাই। একটা কথা আমি পরিস্কার করে বলতে চাই, গণতন্ত্র গণতন্ত্র সেটার কোনো বিকল্প নাই। এই গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করছি। আমরা লড়াই করেছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে। মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন নতুন কৌশল ওরা আবিস্কার করে। এখন নতুন একটা ধোয়া তুলেছে সেই ষড়যন্ত্রকারীরা। সেটা কি? মাইনোরিটির ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আমাদের ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) খুব সুন্দর করে বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো মাইনোরিটি নাই, বাংলাদেশের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক… হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আমরা সবাই মিলে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। সেই সূত্রে যারা আজকে হিন্দু সম্প্রদায়কে তারা আলাদা করে দেখতে চায় আমরা তাদের সঙ্গে একমত নই। তারা সবাই এক নাগরিক।

তিনি বলেন, কিন্তু তাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) ক্ষেপিয়ে তাদেরকে দিয়ে আবার ঢাল বানিয়ে আরেকটা কৌশল আবিষ্কার করে কিভাবে দেশে অস্থিতিশীল করা যায় সেই চেষ্টা সেই কৌশল, সেই ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ করছে। তাদের মূল টার্গেট হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আবার যদি ভারতের সাহায্য নিয়ে ঢুকে পড়া ‍যায়। আপনারা দেখেছেন- ’৫২ সাল, ’৬৯ সাল, ’৭০ সাল ’৯০ সাল, ’২৪ সাল দেশের মানুষ কীভাবে জেগে উঠতে পারে, ফুঁসে উঠতে পারে, গর্জে উঠতে পারে… কোনো শক্তি তাদের কাছে দাঁড়াতে পারে না… সেটাই প্রমাণিত হয়েছে এবারও।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভালোয় ভালোয় এসব ঝামেল ষড়যন্ত্র না করে আপনারা আত্মসমর্পণ করেন। যারা এখনো বাইরে আছে, এদিক-ওদিক করছেন তারা দেখেছেন গতকাল প্রবল প্রতাপশালী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রবল প্রতাপশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কী অবস্থায় তাদের নিয়ে গেছে কোর্টে।

তিনি বলেন, জানেন তো… ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। আমাদের নেতাকর্মীদের কোর্টে এভাবে নেয়া হয়েছিল এবং তারেক রহমান সাহেবকে ওইভাবে হেলমেট পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো….। এদের বিচার করতে হবে। এদের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিরোধী আইনে। অর্থাৎ যে অপরাধ করেছেন, যে ক্রা্ইম করেছেন, গণহত্যা করেছেন, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে তার বিচার আন্তর্জাতিক আইনে হতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, যারা অন্যায় অত্যাচার করেছে, টাকা লুণ্ঠন করেছে, পাচার করেছে তাদের বিচার করতে হবে। বিএনপি জিয়াউর রহমানের দল… কেউ যেন অপবাদ দিতে না পারে আমরা খারাপ কাজ করেছি… সবাই একত্রিত থাকেন, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন এবং এদের সমস্ত চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে যে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেছে তাকে সুসংহত করতে হবে।

তিনি বলেন, এই সরকারকে আমরা সাহায্য করব। এটা ছাত্র-জনতার সরকার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেবো যতক্ষন না পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় এই কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক ছাত্র দল নেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন: