আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসনে ইইউর প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় কোনও দেশে প্রত্যাবাসনের অনুমতি দিতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এজন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদ। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে মঙ্গলবার এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইইউর এই পদক্ষেপ আশ্রয় অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে।
উরোপীয় কমিশন (ইসি) বলেছে, আইনের এই পরিবর্তন যেসব দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিতে নিরাপদ বলে বিবেচিত হবে, সেসব দেশে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবাসনের অনুমতি পাবে জোটভুক্ত দেশগুলো। এর মধ্য দিয়ে ‘‘আশ্রয়প্রার্থীদের অপসারণ করা এবং আশ্রয় ব্যবস্থার উপর চাপ কমানো’’ সম্ভব বলেও মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এই প্রস্তাব আশ্রয়প্রার্থী এবং নিরাপদ তৃতীয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগের প্রয়োজনীয়তাকেও উপেক্ষা করবে বলে শঙ্কা রয়েছে।
ইইউর অভ্যন্তরীণ এবং অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার মাগনুস ব্রুনার বলেন, ‘‘আইন সংশোধন করা হলে নিরাপদ তৃতীয় দেশের ধারণাটি সদস্য দেশগুলোকে আরও দক্ষতার সঙ্গে আশ্রয় দাবি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।’’
তিনি দাবি করেছেন, আইনের এই পরিবর্তনটি অবশ্যই ‘‘ইইউর মূল্যবোধ এবং মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’’
২৭টি দেশের জোট ইইউজুড়ে অভিবাসন বিরোধী মনোভাব বেড়েই চলেছে। ২০১৫ সালে দশ লাখেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী আসেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে আসা এসব অভিবাসীদের বেশিরভাগই ছিলেন সিরীয় নাগরিক। বিপুলসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর রক্ষণাবেক্ষণে হিমশিম খেয়ে হয়েছিল ইউরোপীয় দেশগুলোকে। তখন থেকেই অভিবাসীবিরোধী মনোভাব বাড়তে শুরু করে।
কিন্তু বিপুলসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে সামাল দেওয়া এবং দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়ে একমত হতে পারেনি জোটভুক্ত দেশগুলো। ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো এবং অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণের দিকেই মনোযোগ বাড়িয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীরা যদি তাদের প্রাথমিক আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর আপিল দায়ের করেন, তাহলে আপিল চলাকালীন তারা ইইউ অঞ্চলে থাকতে পারবেন না।
অধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে।
অ্যামনেস্টির অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক ইইউ অ্যাডভোকেট অলিভিয়া সান্ডবার্গ ডায়েজ বলেছেন, ‘‘এই সংশোধনী ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশাধিকারকে আরও ক্ষুণ্ণ করবে, মানুষের অধিকার খর্ব করবে এবং তৃতীয় দেশগুলোতে প্রত্যাবাসন এবং নির্বিচারে আটকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।’’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবাধিকার আর মূল্যবোধ সংহত রাখার কথা বললেও তা মানতে নারাজ এই অধিকারকর্মী। তিনি বলেছেন, অংশীদার দেশগুলোতে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ এবং সমুন্নত রাখতে স্পষ্টত ব্যর্থ হয়েছে ইইউ।
এই মন্তব্যের সময় তিনি অংশীদার কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেননি। তবে লিবিয়া, তিউনিশিয়া, মিসরের মতো দেশগুলোকে ইইউর অংশীদার হিসাবে দেখা হয়। এসব দেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তারপরও সমালোচনাকে আমলে না নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা চুক্তি করেছে ইইউ।
আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসনের সুযোগ তৈরির প্রসঙ্গটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন আশ্রয়নীতি থেকে এসেছে। দীর্ঘ বাগবিতণ্ডার পর ২০২৩ সালে অভিন্ন আশ্রয়নীতিতে সম্মত হয় ইইউর সদস্য দেশগুলো। ২০২৬ সাল থেকে এটি কার্যকর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এজন্য, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং সদস্য রাষ্ট্রের সরকারগুলোর অনুমোদন লাগবে।
এ বছরের এপ্রিলে ইইউ কমিশন মিশর এবং তিউনিশিয়ার মতো দেশগুলোকে নিরাপদ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তাদের দাবি, ওই দেশগুলোতে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু, এই দুটি দেশেই মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রয়েছে নানা উদ্বেগ।
এর আগে, চলতি বছরের মার্চে অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন দ্রুততর করার জন্য ইইউর বাইরের দেশগুলোতে ‘প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র’ বা ‘রিটার্ন হাব’ গঠনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে ইইউ। কিছু সদস্য দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে থাকলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এর কঠোর সমালোচনা করেছে।
বর্তমানে ইইউ দেশগুলোতে অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের হার ২০ শতাংশেরও কম। এই হার বাড়াতেই এমন সব পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইইউ। ইনফোমাইগ্রেন্টস।