আলাদা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে দলগুলো
নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে “সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়” নামে সরকারের হস্তক্ষেপের বাইরে বিচার বিভাগকে রাখতে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত পোষণ করেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য লক্ষণীয় বলে জানায় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
১. নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে পৃথকীকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা। এই সুপারিশের ব্যাপারে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
২. বিচারকদের চাকুরির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করার জন্য সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করার সুপারিশের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে সবগুলো দল।
৩. বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে অসদাচরণ হিসেব বিবেচনা করে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করার সুপারিশের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে।
৪. সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট ও জেলা ইউনিটের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা প্রস্তাবে দলগুলো নীতিগতভাবে বা আংশিকভাবে একমত হয়েছে।
৫. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রদ করে আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কোনো কোনো দল প্রবীণতম তিনজন বিচারকের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
৬. আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা ৭ (সাত) জন নির্ধারণ এবং প্রধান বিচারপতির চাহিদা মোতাবেক সময়ে সময়ে আপিল এবং হাইকোর্ট বিভাগে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
৭. জুডিসিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক সাবেক বিচারপতিদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ, শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সতর্ক করা ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারপতি পদবি ব্যবহার থেকে বারিত করার সুপারিশের সাথে সবদল নীতিগত একমত পোষণ করেছে।
৮. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ড স্থাপন এবং বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শন করার সুপারিশের বিষয়ে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে একটি-দুইটি দল ভিন্নমত প্রকাশ করেছে।
ঐকমত্য কমিশন জানায়, আইনগত সহায়তাকে অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের সুপারিশে সব দল একমত পোষণ করেছে। সেই সঙ্গে আইনজীবী সমিতি নির্বাচন এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দলীয় রাজনীতির প্রভাব বিলোপের জন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের যেকোনো সংগঠনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রস্তাবের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। কোনো কোনো দল আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে গত ৫ মার্চ ৫টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামত প্রদানের জন্য প্রেরণ করে। ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।