আবারও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন নব্বইয়ের দশকের একজন মার্কিন মডেল স্ট্যাসি উইলিয়ামস। সম্প্রতি এ নারী বলেছেন, ট্রাম্প অনুমতি না নিয়েই তার শরীর স্পর্শ করার মাধ্যমে যৌন হয়রানি করেছিলেন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে স্ট্যাসি উইলিয়ামস জানান, স্ট্যাসির সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম দেখা হয় ১৯৯২ সালে বড়দিনের একটি পার্টিতে, যেখানে কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী জেফরি অ্যাপস্টেইন তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। কয়েক মাস পরে, ১৯৯৩ সালে জেফরি তাকে আবার ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন।
এদিকে জেফরির সঙ্গে স্ট্যাসির কয়েক মাসের সম্পর্ক ছিল, তারা তখন একসঙ্গে সময় কাটাতেন এবং প্রেম করতেন। অ্যাপস্টেইনের মাধ্যমেই তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে স্ট্যাসির প্রথমবার পরিচয়ে মনে হয়েছিল, দুই পুরুষের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছেন স্ট্যাসি।
স্ট্যাসি আরও জানান, কয়েক মাস পর, ১৯৯৩ সালের শীতের শেষের দিকে বা বসন্তের শুরুর সময় অ্যা পস্টেইন তাকে আবারও ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করাতে চান এবং তারা একদিন ট্রাম্প টাওয়ারে যান।
ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হওয়ার দিনটি মনে করে স্ট্যাসি বলেন, ট্রাম্প তাকে উষ্ণভাবে জড়িয়ে ধরে তার শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে স্পর্শ করতে থাকেন। সেই পরিস্থিতিতে তাকে পুরোপুরি স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সে সময় স্ট্যাসি হতভম্ব হয়ে যান এবং দেখেন ওই মুহূর্তে ট্রাম্প ও জেফরি একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন বলেও জানান স্ট্যাসি।
বর্তমানে ৫৬ বছর বয়সী স্ট্যাসি বলেন, তিনি ইতোপূর্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ অভিযোগের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি একটি ভিডিও কলে ‘সারভাইভার্স ফর কমলা’ নামের একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে লড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের এতটা কাছাকাছি সময়ে এসে প্রভাবশালী প্রার্থী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাবেক মডেলের যৌন হয়রানির অভিযোগ বেশ আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে ট্রাম্পের প্রচারশিবির থেকে স্ট্যাসির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিত এক বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি স্পষ্ট যে, বারাক ওবামার এক সাবেক কর্মীর মাধ্যমে কমলা হ্যারিসের প্রচারাভিযানের জন্য এ গল্পগুলো সাজানো হয়েছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি কিংবা যৌন কেলেঙ্কারি নতুন কিছু নয়। এর আগে বহু নারী তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা ই জিন ক্যারল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ১৯৯০-এর দশকে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তাকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ এনেছিলেন। ক্যারল মামলা করে জিতেছিলেন এবং জুরি ট্রাম্পকে ৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন।
এর পাশাপাশি, সাবেক মডেল অ্যামি ডরিসও ১৯৯৭ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ সাহসিকতার সঙ্গেই আইনি লড়াই চালিয়েছেন সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে তাকে অর্থ প্রস্তাব করেছিলন ট্রাম্প। আর ব্যবসায়িক নথিতে এ অর্থ লেনদেনের বিষয়টি গোপন রাখায় জালিয়াতির অভিযোগে নিউইয়র্কের আদালতে মামলায় দোষীও সাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এত অভিযোগ-মামলার পরও ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন। তবে নির্বাচনের সময় এ ধরনের অভিযোগগুলো ট্রাম্পের প্রচারে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।