November 23, 2024
খেলাধুলালেটেস্ট

আফগানদের উড়িয়ে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু টাইগারদের

ক্রীড়া ডেস্ক
রঙিন পোশাকের এই সংস্করণে বাংলাদেশ বরাবরই ভীষণ সাদামাটা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ক্রমেই ডুবে যাচ্ছিল অতলে। লিটন দাসের আলো ঝলমলে ফিফটির পর নাসুম আহমেদের দ্যুতিময় বোলিংয়ে কাটল সেই আঁধার। টানা আট হারের পর আফগানিস্তানকে উড়িয়ে জয়ে ফিরল বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬১ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে রানের দিক থেকে আফগানদের এর চেয়ে বড় হার আছে কেবল তিনটি। ফেরার ম্যাচে দুর্দান্ত ফিফটিতে ৪৪ বলে লিটন করেন ৬০। তার সঙ্গে অন্যদের ছোট ছোট অবদান বাংলাদেশ ৮ উইকেটে করে ১৫৫। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাত টি-টোয়েন্টিতে এটাই তাদের প্রথম দেড়শ ছোঁয়া সংগ্রহ। এর ধারে কাছে যেতে পারেনি মোহাম্মদ নবির দল।
পাওয়ার প্লেতে চার উইকেট নিয়ে আফগানদের বিপাকে ফেলে দেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আফগানরা। শরিফুল ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানও উইকেট শিকারে যোগ দিলে ৯৪ রানে থমকে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটা কেবল তৃতীয় জয়, হেরেছে অন্য চারটিতে।
দলটির ১০ উইকেটই ভাগ করে নেন বাংলাদেশের চার বাঁহাতি বোলার। ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সফলতম নাসুম। শরিফুল ৩ উইকেট নেন ২৯ রানে। সাকিব ২ উইকেট নেন ১৮ রানে। শেষ পর্যন্ত সহজ জয় এলেও ম্যাচের শুরুতে এমনটা ভাবা যায়নি। সবুজ ঘাস থাকলেও উইকেট গতিময় নয়, বরং বেশ মন্থর। সুবিধা ছিল বোলারদের জন্য। তবে টিকে থাকলে রান করাও কঠিন ছিল না। সেই কাজটি বাংলাদেশের হয়ে লিটন ছাড়া আর কেউ খুব একটা করতে পারেননি।
যে আগ্রাসী ও নির্ভীক ক্রিকেট খেলার কথা বলেছিলেন অধিনায়ক, টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেটা দেখা যায়নি খুব একটা। অভিষিক্ত মুনিম শাহরিয়ার দ্বিতীয় বলে চমৎকার কাভার ড্রাইভে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খোলেন রানের খাতা। কিন্তু প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি তিনি, বড় করতে পারেননি নিজের ইনিংস।
রশিদ খানের বলে অফে সরে জায়গা করে নিয়ে ঘুরাতে চেয়েছিলেন লেগে। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। এলবিডব্লিউ হওয়া মুনিম (১৮ বলে ১৭) ফেরেন রিভিউ নষ্ট করে। এর আগেই অবশ্য ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। বিপিএলে বাজে সময় কাটানো মোহাম্মদ নাঈম শেখ স্রেফ ২ রান করে হয়ে যান এলবিডব্লিউ।
লিটন অটল থাকলেও অন্য প্রান্তে ছিল তার সতীর্থদের আসা যাওয়া। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কাইস আহমেদের বলে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন সাকিব। একটা ছক্কা মেরেই থেমে যান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
শুরুতে একটু সময় নেন লিটন। মুজিব উর রহমানের এক ওভারে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ডানা মেলার আভাস দিয়েও থেমে যেতে হয় অন্য প্রান্তে উইকেট হারানোয়। এক সময়ে তার রান ছিল ২১ বলে ২৩। কাইসকে স্লগ সুইপ করে ছক্কা মারার পর কাট করে পয়েন্ট দিয়ে ওড়ান আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে।
৩৪ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি পাওয়ার বেশি দূর যেতে পারেননি লিটন। ফজলহক ফারুকির স্লোয়ার শর্ট ডেলিভারিতে বলের নিচে গিয়ে গায়ের শক্তিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু মন্থর গতির কারণে টাইমিং করতে পারেননি, শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ নেন ওমরজাই। লিটন ৪৪ বলে দুটি ছক্কা ও চারটি চারে করেন ৬০ রান।
রানের গতি বাড়ানোর মুহূর্তে আউট হয়ে যান আফিফ। দুই চারে ২৪ বলে ২৫ রান করে ধরা পড়েন নবির হাতে। ইয়াসির আলি ও মেহেদি হাসানের রান আউটে শেষটায় ওঠেনি ঝড়। বাংলাদেশের ইনিংস থমকে যায় ১৫৫ রানে। ৪ ওভারে কেবল ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন রশিদ। দুটি করে নেন ফারুকি ও ওমরজাই। রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। নাসুম আহমেদের বাঁহাতি স্পিনে ২০ রানেই হারিয়ে ফেলে চার উইকেট।
মেহেদি ও মুস্তাফিজের বলে দুটি সুযোগ হাতছাড়া না হলে সফরকারীদের অবস্থা হতে পারতো আরও খারাপ। দ্বিতীয় ওভারে হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের ক্যাচ ছাড়েন মুনিম। চতুর্থ ওভারে নাজিবউল্লাহ জাদরানকে জীবন দেন লিটন। সে সময় ৪ রানে ছিলেন নাজিবউল্লাহ।
প্রথম ওভারেই বিপজ্জনক রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন নাসুম। জায়গা বানিয়ে খেলার জন্য একটু আগেভাগেই স্টাম্প ছাড়েন গুরবাজ। সেটি দেখেই বল টেনে দেন নাসুম। আফগান ওপেনার তাই করতে পারেননি টাইমিং। সহজ ক্যাচ নেন ইয়াসির।
তৃতীয় ওভারে তিন বলের মধ্েয জাজাই ও অভিষিক্ত দারবিশ রাসুলিকে বিদায় করেন নাসুম। স্লগ করার চেষ্টায় মিড অফে নাঈমের হাতে ধরা পড়েন আগের ওভারে জীবন পাওয়া জাজাই। ফুল লেংথ বলে সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন রাসুলি। নিজের তৃতীয় ওভারে চতুর্থ শিকার ধরেন নাসুম। চার মেরে পরের বলেই জায়গা করে নিয়ে খেলার চেষ্টায় এক্সট্রা কাভারে ধরা পড়েন করিম জানাত। পরের বলে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন মোহাম্মদ নবি। নবির সঙ্গেই নাজিবউল্লাহর জুটিতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে আফগানিস্তান। মন্থর ব্যাটিংয়ে ক্রমেই বাড়ছিল রান রেটের চাপ।
শেষ ১০ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০৩ রান। তাই সময়ের দাবি ছিল বড় শট। সাকিবের বলে সেটা খেলার চেষ্টাতেই ডিপ কাভারে আফিফের হাতে ধরা পড়েন নবি। সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি সাকিবের চারশতম শিকার।
পরের ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার পান আরেকটি উইকেট। ছক্কার চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে মুনিমের হাতে ধরা পড়েন নাজিবউল্লাহ। ঝড় তোলার আগেই রশিদকে থামান শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসারকে চার-ছক্কা মারার পর মুস্তাফিজের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টায় মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন ওমরজাই। আষ্টাদশ ওভারে চার বলের মধ্যে দুই উইকেট নিয়ে আফগানদের গুটিয়ে দেন শরিফুল। বাংলাদেশ পায় দেশের মাটিতে সবচেয়ে বড় জয়। আগেরটি ছিল গত অগাস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, সেবার ৬০ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচে হারার পর দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয় বাংলাদেশ। সেই হারের বৃত্ত ভাঙল এই জয়ে। শনিবার আফগানদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে একই ভেন্যুতে খেলবে মাহমুদউল্লাহর দল। আসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া নাসুম জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *