June 5, 2025
খেলাধুলা

আন্তর্জাতিক কোচ হতে চান মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিসিবি সভাপতি হয়েছেন। শুক্রবার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আজ দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে এসেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। বিসিবির পরিচালকদের নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার সাথে আলোচনার পর এসেছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের (বিএসজেএ) কার্যালয়েও।

আশির দশক থেকে বুলবুল ক্রীড়াঙ্গনে। তাই ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে তার সখ্যতা দীর্ঘদিনের। বিএসজেএ’র সিনিয়র সদস্য ও সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিকদের আড্ডায় ফিরে গেলেন অতীত স্মৃতি রোমান্থনে। কখনো গেন্ডারিয়ায় ফুটবলের দিনগুলোতে আবার কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নানা ঘটনা প্রবাহে। ক্রীড়াঙ্গনের নানা আলাপের মাঝে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কুশলাদিও চলছিল।

সব কিছু ছাপিয়ে বুলবুলের পরিচয় এখন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে কাছে পেয়ে সাংবাদিকরা অনেক প্রশ্নই করেছেন। বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর বুলবুল বলেছিলেন,‌ ‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ।’ এই প্রক্রিয়া বা ধারণার ব্যাখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার তিনটি কাজ। শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম ও শতভাগ রিচ। বাংলাদেশে শতভাগ রিচ করব, আমাদের ট্রাস্ট থাকবে, আমাদের প্রোগ্রাম থাকবে। এই ট্রিপল সেঞ্চুরিটা করার জন্য ক্রিকেট বোর্ড তিনটা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে।’

‘আমরা স্পিরিট অব ক্রিকেট আপগ্রেড করব। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, সবার জন্য হাই পারফরম্যান্স। শুধু ক্রিকেটার নয়, যারা কর্মকর্তা আছে, তাদের কাজও যেন হাই পারফর্মিং হয়। আর তিন নম্বর হচ্ছে, সারা দেশব্যাপী কানেক্ট করব। ক্রিকেট বোর্ড শুধু মিরপুরে বসে থাকবে না। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আঞ্চলিক সংস্থার কাঠামো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা হয়নি। আমরা যেভাবে হোক, বুরোক্রেটিক হয়ে হোক, এনএসসিও আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। এর আগেও আমরা শুধুমাত্র ক্রিকেট নিয়ে দেশের সব জায়গায় আঞ্চলিক সংস্থার মতো করে ছড়িয়ে যাচ্ছি খুব শিগগিরই। আইসিসির কাছে এটা আমাদের একটা প্রতিশ্রুতি ছিল। এখন এটা আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। অবশ্যই ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সও এর সঙ্গে আছে।’

আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার রূপরেখা ও কার্যকরিতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ করি যে, ঢাকায় বসে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর দল বানানো হয়। এটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। এটা হচ্ছে আল্টিমেট। তবে তৃণমূল ক্রিকেটে যেন গ্রামের একটা ছেলে ক্রিকেট খেলতে পারে। এরপর সে উপজেলা, জেলায় খেলতে পারে। পরে ক্রমান্বয়ে যেন জাতীয় দলে আসতে পারে। এটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়, ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করব। আমরা রিজিওনগুলোকে কিন্তু বোর্ড থেকে কোনো অনুদান দেবো না। তাদেরকে পারফরম্যান্স, ক্রিকেটারের সংখ্যা, সুবিধাদি, কোচ, আম্পায়ারদের সংখ্যা মিলিয়ে অর্জন করে নিতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে তারা যেভাবে কাজ করবে, সেভাবে তাদের ফান্ডিং দেওয়া হবে। এই ফান্ডিং মডেলটাও আমরা করে দিচ্ছি।’

আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম আক্ষেপ। নানা কারণে আলোর মুখ দেখে না। আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হলে বিসিবি কর্তাদের ক্ষমতাও খানিকটা খর্ব হওয়ার শঙ্কা থাকে। বুলবুল সেই বাধা অতিক্রম করতে চান, ‘যেহেতু এটা আমাদের একটা আবশ্যিক চাহিদা। এটা পূরণের জন্য যদি কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নেবো। এটা সকলের সমর্থন নিয়েই করতে হবে। প্রতিবন্ধকতা যদি আসে, প্রথমে আমরা হয়তো শুধু ক্রিকেটটা নিয়ে পৌঁছাব। এরপর রিজিওনাল সেন্টারটা করব। এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, কানেক্ট এন্ড গ্রো-এর যে প্রোগ্রাম আছে, আমরা ক্রিকেট নিয়ে তৃণমূলে পৌঁছাব।’

ক্রিকেট বোর্ডে আকরাম খান, নান্নু, সুমনদের মতো সাবেক তারকা খেলোয়াড়রা রয়েছেন। তাদের মেধা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করতে চান নতুন সভাপতি, ‘নান্নু ভাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আকরাম ভাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। লিপু ভাই, হাবিবুল বাশার… তারা তো একেকজন কিংবদন্তি। তারা সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ। তারা মাঠের চরিত্র, উইকেটের চরিত্র, ড্রেসিং রুমের চরিত্র- সব জানেন। এই ধরনের সাব্জেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের আমাদের অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। তবে এটা ঠিক যে একজন খেলোয়াড় সরাসরি ভালো এডমিনিস্ট্রেটর হয় না বা ভালো কোচ হয় না। সেই ব্যবস্থাগুলো করব।’

তার সময়কার ক্রিকেটারদের পাশাপাশি হাল আমলে দুই সেরা ক্রিকেটারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন, ‘সেই লক্ষ্যে আমি বলতে চাই, এখানে বলা উচিত কি না জানি না। আমি বিসিবিতে জয়েন করার আগেই আমার সঙ্গে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ যোগাযোগ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক কোচ হতে চায়। এই ট্রেনিং এডুকেশন প্রোগ্রামগুলো আমরা ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে রান করব ইনশাল্লাহ।’

বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ অক্টোবর পর্যন্ত। সেই হিসেবে আর মাত্র তিনেকের বেশি সময় রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে নতু সভাপতির মন্তব্য, ‘আমরা যে কাজগুলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু এখনও ৪৮ ঘণ্টা হয়নি। আমরা একটু জেনে এটা নিয়ে বলতে পারব।’

শেয়ার করুন: