September 19, 2024
আঞ্চলিক

আত্মগোপনে খুলনার কাউন্সিলররা, নাগরিক সেবা ব্যাহত

আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সাবেক মেয়রসহ বেশিরভাগ কাউন্সিলর। তারা অফিস করছেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই এলাকায় ফিরেছিলেন। সিটি করপোরেশনে না গেলেও কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা। বাড়িতে অবস্থান করেই নাগরিক সেবা দেওয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু একের পর এক মামলা হওয়ার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন জনপ্রতিনিধিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ব্যবধানে নগরীর ৪১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৮ জনই হয়েছেন মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলাগুলোতে। যারা আসামি হননি তারাও এখন আর কার্যালয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লাখো মানুষ।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১২ জুন সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় খুলনা সিটি করপোরেশনের। নির্বাচনের চার মাস পর দায়িত্ব পান কাউন্সিলররা। নির্বাচনে নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের ৩০টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা জয় পান। শুধু ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জামায়াত নেতা শফিকুল আলম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপিসমর্থিত মাজেদা খাতুন ছাড়া অন্য ৯টিতে জয় পান মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীরা। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশিরভাগ কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে যান। অনেকের বাড়িতে হামলা, লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় ১৯টি ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়। ১৭ ও ২৮ নম্বর কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ১০ আগস্টের পর থেকে কাউন্সিলররা খুলনায় ফিরতে শুরু করেন। তবে অর্ধেকের বেশি কাউন্সিলর নিজ এলাকা ও কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন না। এরমধ্যে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) খালিশপুর থানায় দুটি মামলা করেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকদলের আহ্বায়ক শেখ দবির ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক কাজী মো. ইকরাম মিন্টু। মামলা দুটিতে কেসিসির ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫, ১৮, ১৯, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। এরপর শনিবার থেকে কাউন্সিলররা আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।

সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ, সংশোধন, নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, ভূমিহীন সনদ দেওয়া হয়। এগুলো পেতে প্রতিটি সনদে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সই প্রয়োজন। তবে কাউন্সিলররা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা সেবা পাচ্ছেন না। কয়েকটি ওয়ার্ডে সচিবরা আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলরদের কাছে গিয়ে সই নিয়ে আসছেন। তবে এতে স্বাভাবিকের চেয়ে সময় লাগছে বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর বলেন, ‘এখন সময় ভালো না। কখন কী হয়ে যায় সেই ভয়ে আছি। অনেকের বাড়িতে হামলা হয়েছে। কারও কারও বাড়িতে গুলিও করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কার্যালয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আত্মগোপনে থেকে নাগরিক সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম বলেন, কার্যালয়গুলো ব্যবহার উপযোগী করে সেবা কার্যক্রম চালুর জন্য আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই কার্যক্রম চলছে। কাউন্সিলরদের আত্মগোপনের বিষয়টি জানা নেই।

শেয়ার করুন: