‘অসম্মান-কটূক্তি ও মানসিক চাপ’ নিয়ে কাঁদলেন সাবিনা-মাসুরা
৩০ অক্টোবর সন্ধ্যার পরই নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসবে মেতেছিলেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। যা তাদের টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব। তিন মাস পর আজও (৩০ জানুয়ারি) সাবিনা খাতুনদের চোখে অশ্রু। এবার কারণটা অবশ্য ভিন্ন, আপন ঘর বাফুফে ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে শোনালেন বিদ্রোহের সুর! পিটার বাটলার কোচ থাকলে সাফজয়ী ফুটবলাররা অবসরের হুমকিও দিয়েছেন।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের চড়াই-উতরাইয়ের সঙ্গী ছিলেন সাবিনা। মাঠে ও মাঠের বাইরে লড়েছেন অনেক। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলনের পর থেকেই সমস্যার সৃষ্টি। সেই কষ্টে আজ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে আসেন ফুটবলাররা। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন কথা বলতে গিয়ে শুরুতেই কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘একটা বিষয়ই বলার (আছে), নিজেদের প্রমাণের কিছু নেই। ব্যাপারটা আত্মসম্মানের। (এরপর আবেগপ্রবণ হয়ে যান সাবিনা)। আমরা দেশের জন্য খেলি। সেই (কোচ বাটলার) তাদের নিয়ে কটূক্তি করছে, মেয়েদের জন্য এটা অসম্ভব।’
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলার কৃষ্ণা রাণী সরকার বলেন, ‘আমরা মাঠে খুবই মানসিক চাপে থাকি। বিশেষ করে উনি হচ্ছে আমাদের অঙ্গভঙ্গি…খুব সকালে উঠতে হয় আমাদের, একটু ক্যাজুয়াল থাকতেই পারি। কিন্তু উনি আমাদের নিয়ে কটূক্তি করে। যেটার কারণে আমরা আপসেট হয়ে যাই।’ জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান গোলরক্ষক রুপ্না চাকমা। তিনি একটু খর্বকায় হলেও পারফরম্যান্সে অসাধারণ। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন। ব্রিটিশ কোচ বাটলার রুপ্নার উচ্চতা নিয়েও নাকি কটূক্তি করেন– এমন অভিযোগ করেছেন আজ নারী ফুটবলাররা।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে। ঋতুপর্ণা চাকমা ব্রিটিশ কোচের ওপর ব্যক্তিগত পর্যায়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছেন, ‘আমরা এখন বড় হয়েছি। ছুটির দিনে ঘুরতে যেতেই পারি। কোথায় গেলাম, কার সঙ্গে কফি খেলাম এসব নিয়েও সে আমাদের চাপে রাখে।’
নারী ফুটবলাররা বাফুফে ভবনের ক্যাম্পেই থাকেন। অনুশীলন ও খেলার বাইরে মোবাইলে একটু বেশি সময় কাটান তারা। এ নিয়ে ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন বলেন, ‘আমরা যেহেতু ফেসবুকে একটিভ থাকি, আমাদের কাছে ফোন থাকে। আমাদের কারও কাছে প্রমাণের বা বলার কিছু নেই। আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি, এই কোচের অধীনে অনুশীলন করব না।’
২০১৫ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ের পর থেকে বাফুফে নারী ফুটবলে জোর দিয়েছে। প্রায় ১০ বছর ভবনের চারতলায় ক্যাম্প করছে মেয়েরা। এজন্য অধিনায়ক সাবিনা ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আজ একটা পর্যায়ে এসেছি, এটা অবশ্যই ফেডারেশনের অবদান। আমরা এতদিন আছি, কখনও কোনো কোচ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি, কোনো কোচও আমাদের নিয়ে কিছু বলেননি। উনাকে নিয়ে যেহেতু বলছি, নিশ্চয়ই সমস্যা রয়েছে।’
মূল সমস্যার শুরুটা হয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময়। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলছিল। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও কোচ নাকি সন্তষ্ট ছিলেন, ‘আমরা হেরে যাচ্ছি। এরপরও কোচ বলছেন ভালো খেলা হচ্ছে। আমাদের কি ভালো খেলা প্রয়োজন নাকি জয় দরকার আপনারাই বলেন’, প্রশ্ন রাখেন মাসুরা।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মারিয়া মান্ডা কোচের আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, ‘সাফের সময় ডাইনিংয়ে মারিয়া আপুর টুপি নিয়ে কোচ প্রশ্ন করে। সে টুপি খোলেনি। এজন্য তাকে কোচ খেলাবেই না, অনুশীলনেও রাখবে না। আমরা এতদিন জানতাম বাইরে যাই হোক, মাঠের বিষয় আলাদা। কিন্তু তার সময় দেখলাম ভিন্ন।’