অর্থ বিল পাস: কালো টাকা সাদার করার সুযোগ ও সর্বোচ্চ আয়সীমা থাকছে ২৫%
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কিছু সংশোধনীসহ আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থ বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। শনিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে পাস হয় বিলটি। বিলটি পাসের আগে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সংশোধনী আনেন। এরমধ্যে কিছু সংশোধনী অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গ্রহণ করেন। অন্যগুলো তিনি গ্রহণ করেননি। পরে সেগুলো কণ্ঠভোটে অনুমোদন করেন সংসদ সদস্যরা।
এর আগে এদিন বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের। পরে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত ৬ জুন সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। বাজেট প্রস্তাবের ওপর ১১ দিন আলোচনা শেষে অর্থবিল পাস হল। রবিবার বাজেট পাস হওয়ার কথা।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার মধ্যে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রেখেই এ বিল সংসদে পাস হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন ছাড়া জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকলেও এলাকা অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া কর অনুযায়ী সেগুলো বৈধ করা যাবে। এর ফলে আগামী জুলাই থেকে এক বছরের জন্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা।
বিনাপ্রশ্নে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অপ্রদর্শিত অর্থ, নগদ টাকা এবং শেয়ারসহ যে কোনো বিনিয়োগ কর দিয়ে ঢালাওভাবে সাদা করতে পারবে। বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষে সংশোধনের প্রস্তাব আনেন সংসদ সদস্যরা। এরমধ্যে আয়করে ব্যক্তির সর্বোচ্চ করধাপ ৩০ শতাংশের পরিবর্তে আগের মতই ২৫ শতাংশ থাকছে। এর আগে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী করহারের ধাপে কিছুটা পরিবর্তন এনে সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন।
অন্যদিকে অর্থবিলে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ যেকোনো আয় এবং পেনশন স্কিমে প্রদত্ত যেকোনো পরিমাণ চাঁদা করের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। এতে কোম্পানি, তহবিল ও ট্রাস্ট কর্তৃক অর্জিত মূলধনি আয়ের উপরও ১৫ শতাংশ কর বসছে। প্রস্তাবিত বাজেটে কেবল ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই বিধান রাখা হয়েছিল।
একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে না বলে অর্থবিলে সংশোধন আনা হচ্ছে। গত করবর্ষের তুলনায় অন্যূন ১৫ শতাংশ অধিক আয় কেউ যদি রিটার্নে প্রদর্শন করেন, তাহলে তাকে অডিটের আওতামুক্ত রাখা হবে। এছাড়াও কেবল সিটি করপোরেশনে অবস্থিত কোনো কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল ভাড়া নিলে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি সকল স্থানের কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হল ভাড়ার ক্ষেত্রে করা হয়েছিল।
পরে বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করেছি, যেমন বাজেট ঘাটতি হ্রাসকরণ, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছসাধনের উদ্যোগ। এসব নীতি ও কৌশলের কল্যাণে আগামী বছর মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাজেট এমন সময় প্রস্তাব করা হয়েছে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটসহ নানা বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতিসহ নানা সমস্যা মোকাবিলা করছে। তাই এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। এ জন্য ব্যাংক সুদের হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য রফতানি উৎসাহিতকরণ এবং প্রবাসী আয়ে গতি আনতে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়