অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য
সাধারণভাবে বলা যায় যে রাজনীতিক জীবন, কাঠামো কার্যাবলী ও প্রক্রিয়ার পরিবর্তনই হল রাজনীতিক উন্নয়ন। পরিবর্তন উন্নয়নের একটি ধাপ। প্রত্যেক পরিবর্তন উন্নয়ন হিসাবে বিবেচিত হয় না। এই পরিবর্তনের মধ্যে প্রচলিত অবস্থা থেকে সরে আসার প্রবণতা বর্তমান থাকে। সমকালীন সামাজিক-রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে অসন্তোষ সূত্রে পরিবর্তনের এই প্রবণতার সৃষ্টি হয়।
রাজনীতিক উন্নয়ন হল এক গতিশীল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অবস্থা থেকে আর একটি অবস্থায় উপনীত হওয়া যায়। রাজনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাদের পান্ডিত্বপূর্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। তবে আমরা এখানে রসটো ও পাই-এর অভিমতকে সর্বাধীক প্রনিধানযোগ্য মনে করছি। তাদের মত অনুসারে রাজনৈতিক উন্নয়ন হলো ‘জাতীয় রাজনীতিক ঐক্য’। রাজনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তারা বলেছেন যে, রাজনীতিক উন্নয়ন হলে রাজনীতিতে মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ অংশগ্রহণের বিস্তারই হল রাজনীতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্য।
কত শতাংশ মানুষ আজকাল রাজনীতিতে আগ্রহ রাখে? কত শতাংশ মানুষ রাজনীতিবিদদের পছন্দ করেন? এর সঠিক হিসেব দেওয়া যায় জরিপ পরিচালনা করে, কিন্তু সেটার প্রয়োজন নেই কারণ বাস্তব অবস্থা আমরা জানি। এর কারণ আমাদের দেশে কাঙ্খিত অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও আশানুরুপ রাজনৈতিক উন্নয়ন হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নীতি ও আদর্শে পার্থক্য না থাকলেও তাঁদের আচরণ অসৌজন্যে পরিপূর্ণ। রাজনীতিবিদেরা একজন আর একজনকে ততটা সম্মান করেন না যতটা তার প্রাপ্য। একটি দল অপর দলকে বিশ্বাস করে না। তাদের আস্থা তলানীতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়টি তো রাজনীতিবিদদের অনাস্থার বিষময় ফল। একটি দেশে রাজনৈতিক উন্নয়ন হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়না।
রাজনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন না হলে অর্থনৈতিক উন্নতি ভালনারেবল থাকে। যে কোনো মুহুর্তে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এসে হাজির হতে পারে। মুহুর্তে সব অর্জন মাটি হয়ে যেতে পারে। বিশ্বে বহু নজির আছে এরকম। চুড়ান্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মুখ দেখার পরও পথের ফকিরে পরিণত হয়েছে বহু দেশ। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ইরাক প্রভুত উন্নতি করেছিল, কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা ততটা উন্নত ছিল না। ফলে যখনই বিদেশী শক্তি দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চেয়েছে, তখনই তারা সেটা পেরেছে। আমরা আশা করি, এসব ইতিহাস বিবেচনা করে, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ব্যপারে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি সচেষ্ট হবে এবং নিজেদের মতপার্থক্যকে তারা দূর করবে, পরস্পর পরস্পরকে তারা আস্থায় নেবে। রাজনীতির উন্নতিবিধানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারাকে তারা অব্যাহত রাখবে। শত উস্কানির মুখে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের মধ্যে ধৈর্য ও সহশীলতার চর্চা করবে। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য।