অভিযোগ তুলে নিয়ে ভুল স্বীকার করলেন তানজিন তিশা
ছোটপর্দার অভিনেত্রী তানজিন তিশার অপেশাদার বক্তব্য ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে সরব সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে জড়ো হন টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও রেডিওতে নিয়োজিত বিনোদন বিভাগের সংবাদকর্মীরা। এ সময় তিশাকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন সাংবাদিকরা।
এদিকে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ক্ষমা চাননি তিশা। এ অবস্থায় নতুন পথে হাঁটেন সাংবাদিকরা। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাকে সব ধরনের নির্মাণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তারা। নতুন খবর হলো, এবার ভুল স্বীকার করে অপেশাদার আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন তিশা।
ডিবি কার্যালয়ে বৈঠক শেষে তানজিন তিশা বলেন, আপনাদের সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় আমি অভিনয় শিল্পী তানজিন তিশা। আমি কয়েকদিন আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম। বাসায় ফেরার পর দেখলাম দুই একটি নিউজ পোর্টাল আমার আত্মহত্যার চেষ্টা শিরোনামে নিউজ করেছে। এমন সময় সাংবাদিক তামিম যার সঙ্গে আমার কোনো পূর্ব পরিচয় নেই তিনি আমাকে এমন একটি টেক্সট করেন যেটা ওই সময়ের জন্য যৌক্তিক মনে হয়নি। আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে টেক্সটের বিষয়ে নিউজ করলে ব্যবস্থা নেব বলে জানাই। আমি সেসময় তার সঙ্গে ফোনে যে শব্দ উচ্চারণ করেছি আমি জানি তা সঠিক নয়। তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং এখনও করছি।
এরপর তিশা বলেন, এরমধ্যে আমার অনুমতি ছাড়া তামিমের সঙ্গে আমার কথোপকথনের রেকর্ড প্রচার করা হলে তা শুনে অন্যান্য সাংবাদিকরা রেগে যান, প্রতিবাদ করেন যা খুবই যৌক্তিক এবং আমাকে ও আমার পরিবারকে নিয়ে অনেক অসত্য মনগড়া আজেবাজে সংবাদ সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখেন যা একজন নারীর জন্য অসম্মানজনক। এমনকি অনেকে আমি ছাড়াও সকল শিল্পীদের সাইবার বুলিং, হুমকি, অনেক কুৎসা রটনা করতে থাকেন। এসব দেখে আমি ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ করতে আসি। সেখানে গণমাধ্যম থেকে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি তখন তামিমের নাম নেই। তার প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে ফেলি। যেটা আমি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করিনি। সেজন্য আমি প্রতিষ্ঠানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মাঝে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আমি পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেছি সেটাও তুলে নিচ্ছি। যারা আমার ও আমার পরিবারকে ঘিরে অসত্য লেখা প্রকাশ করেছেন তারাও তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবেন এবং লেখাগুলো সরিয়ে নেবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি। আমি আরও চাই যারা মূলধারার সাংবাদিক আছেন তারা আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন, শিল্পীদের সহযোগিতা করবেন এবং যারা অসত্য নিউজ করেন তাদের প্রতিহত করবেন। যারা আমার পাশে ছিলেন, আমার অভিনয়শিল্পী সংগঠনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি যে ডিবি অফিসে অভিযোগ জানিয়েছি তারাও সমঝোতার মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করেছেন তাদেরও আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। হারুন স্যারকে ( ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ) ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যম এবং তানজিন তিশার মধ্যে যা ঘটেছে তা প্রত্যাশিত ছিল না। শিল্পীদের একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, সাংবাদিকরা তাদের প্রতিপক্ষ নয়। গণমাধ্যমের কাজ প্রশ্ন করা, তথ্য যাচাই বাছাই করে পাঠক ও দর্শকদের সামনে তুলে ধরা। এই কাজটি করতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়, মনোমালিন্য হয় যা কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। একটি কল রেকর্ড কেন্দ্র করে তামিম ও তিশার মধ্যে যা হলো তা কাম্য নয়। তামিম তিশাকে ওই সময় ওই প্রশ্নটি না করলেও পারতেন। কিংবা তিশাও প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে পারতেন। আমরা একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চাই। অগ্রজদের সম্মান আর অনুজদের ভালোবাসা দিতে চাই, নিতেও চাই। এরমধ্যে তানজিন তিশা তার জায়গা থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, আমরাও আমাদের জায়গা থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।
আজ শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিশা। অভিনয়শিল্পী সংঘ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সামনে দুঃখ প্রকাশ করেন তিশা।
ঘটনার সূত্রপাত তিশার আত্মহত্যার চেষ্টার খবর চাউর হওয়ার পর থেকে। সেসময় সংবাদকর্মীদের এক হাত নেন তিশা। মুশফিক আর ফারহানের সঙ্গে তার প্রেম সম্পর্কে কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তাকে উড়িয়ে ফেলার হুমকি দেন তিনি। বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তামিমকে এ হুমকি দিয়েছিলেন তিশা। পরে ডিবি কার্যালয়েও তামিমকে নিয়ে অপেশাদার বক্তব্য দেন এ অভিনেত্রী।