অনুমোদনের এক চতুর্থাংশ ইলিশও যায়নি ভারতে!
ক্ষমতার পালাবদলের পর এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবেশী ভারতে ইলিশ যাবে কি না এটা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমে ইলিশ রফতানি করবে না বলে জানালেও অবশেষে ইলিশ পাঠাতে সম্মত হয়। এতে নানা মহল থেকে সরকার তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে। দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না, এই অবস্থায় কম দামে বিদেশে রফতানির সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। তবে নির্ধারিত সময়ে সরকারের অনুমোদন দেওয়া পরিমাণের এক চতুর্থাংশ ইলিশও প্রতিবেশী দেশটিতে যায়নি।
শর্তসাপেক্ষে দুই হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) ছিল ইলিশ রফতানির শেষ দিন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে ইলিশ রফতানি হয়েছে মাত্র ৫৩৩ মেট্রিক টন। যা সরকারের দেওয়া রফতানি আদেশের মাত্র ২২ শতাংশ।
কেন আশানুরূপ ইলিশ এবার ভারতে রফতানি হয়নি সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন নানা কারণ। তারা বলছেন, দেশে ইলিশ–সংকট ও উচ্চ দাম এবং পশ্চিমবঙ্গে চাহিদা কম থাকার কারণে অনুমোদিত রফতানি কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা মতামত ও প্রতিক্রিয়া এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনার কারণেও রফতানিতে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার প্রথমে ইলিশ দিতে চায়নি। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ইলিশ না পাঠানোর কথা বলেছেন। এর প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে। বাংলাদেশের ইলিশ না খাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলে। এতে সেখানকার স্থানীয় বাজারে ইলিশের চাহিদা কমে যায় বলে মনে করেন রফতানিকারকেরা।
সময় স্বল্পতাকেও দুষছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, ইলিশ চেয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ আর বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া অনুমতির মধ্যকার সময় স্বল্পতার কারণে পুরো ইলিশ রফতানি করা যায়নি। পূজা শুরুর পর ভারতীয় অংশে আমদানি বন্ধ এবং রফতানির জন্য হাতেগোনা মাত্র কয়েকটা দিন থাকায় ইলিশ রফতানিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ইলিশ রফতানিকারক বেনাপোলের সততা ফিশের রেজাউল করিম জানান, দেশে ইলিশ সংকট আর বেশি দামের কারণে চাহিদা মতো রফতানি করা যায়নি। সময় বাড়ালে হয়তো আরও কিছু রফতানি সম্ভব ছিল।
তবে ইলিশ রফতানির সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন জানিয়েছেন, শুধু এবার যে কম ইলিশ গেছে এমনটাই নয়। বিগত পাঁচ বছরেও রফতানির অনুমতি পাওয়া পুরো ইলিশ পাঠানো যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালে চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর বিপরীতে রফতানি হয়েছিল মাত্র এক হাজার ৩৭৬ টন।
এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরে কমিয়ে দুই হাজার ৪২০ টন করা হয়। এই অনুমতি দেওয়া হয় ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে দুই হাজার ৪০০ টন আর অন্য প্রতিষ্ঠানটি ২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন পায়।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ছিল মাছ রফতানির শেষ দিন। সে অনুযায়ী, গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বেনাপোল পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৫৩৩ টন ইলিশ রফতানি হয়েছে ভারতে। যার রফতানিমূল্য ৫৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বলে জানান কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা। এ বছর ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ গড়ে ১০ মার্কিন ডলারে রফতানি হয়েছে, যা দেশের এক হাজার ১৮০ টাকার মতো। দেশের বাজারে অবশ্য আরও অনেক বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হয়, যা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেন।