October 3, 2024
আঞ্চলিক

খুলনায় জলে গেছে জলাবদ্ধতা নিরসনের ১৪৮৩ কোটি টাকা!

খুলনায় ১৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোয় সমাধান তো আসেনি বরং সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এক ঘণ্টার ভারী বর্ষণেও প্লাবিত হচ্ছে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে খুলনায় তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নগরের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পানিতে থৈ থৈ করছে। একই অবস্থা খুলনা সরকারি টিসার্চ ট্রেনিং কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউটে প্রবেশের রাস্তা এবং খেলার মাঠের।

গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের খেলার মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। জাতি সংঘ শিশু পার্কের খানজাহান আলী সড়ক, বাইতি পাড়ার মোড়, মুজমুন্নী, বাস্তুহারা, ৩১ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁটু পানি ডিঙিয়ে হাঁটতে হচ্ছে মানুষকে। ডুবে থাকা রাস্তায় খুব সাবধানে চলছে গাড়ি।

কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) এলাকার মধ্যে সড়ক আছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি, যার অধিকাংশই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায়।

খুলনা নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে সিটি করপোরেশন ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করছে। এ ছাড়া আরও ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়নে কাজ চলমান রয়েছে। গত পাঁচ বছরে এই দুই প্রকল্পে প্রায় ১৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হলেও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি।

বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার আতঙ্কে থাকে নগরবাসী। বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই জনদুর্ভোগ। অথচ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খরচ করা হয়েছে বিপুল অংকের অর্থ।

জলাবদ্ধতায় ক্ষিপ্ত নগরবাসীর অনেকে বলেছেন, বিগত ৫ বছরে খুলনায় সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের অবকাঠামো নির্মাণ ও ড্রেনের সংস্কারের জন্য নেওয়া হয়েছে একের পর এক প্রকল্প। উদেশ্য ছিল মেগা লুটপাট। গত ৫ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। বরং বেড়েছে। নালা রাস্তাসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজের কারণে পানি নিষ্কাশন কম হয়। ফলে আগের চেয়ে আরও বেশি পানি জমে।

ইউনি ভিশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, খুলনার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতা। শত শত কোটি টাকা এই জলাবদ্ধতা নিরসনে বাজেট করা হলেও কার্যকর কোনো সমাধান হয়নি। সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সরেজমিনে কাজ তদারকি করতে গিয়ে ঠিকাদারকে হুমকি ধমকি দিলেও তা ছিল লোক দেখানো। কারণ এখন পত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে, তিনি নিজেই ঠিকাদার ছিলেন। অথবা ঠিকাদারীর ভাগ পেতেন। তাই তার হুমকি ধমকি ছিল লোক দেখানো। মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের পকেট ভরা ছিল বিগত সরকারের খেলা!

নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর খুলনা সিটিতে উন্নয়নের নামে নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে করে সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ঠিকাদাররা। যে কারণে অনেক প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেনি। জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়িত প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার পরও জলবদ্ধতামুক্ত হয়নি খুলনা শহর। বলতে গেলে সব টাকায়ই জলে গেছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় নগরের অধিকাংশ সড়ক।

কেসিসির প্রধান কনজারভেন্সি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ড্রেনের কাজ সমূর্ণ শেষ না হওয়ার কারণে বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। নদীতে ভাটা হলে পানি নেমে যায়। জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে নগরে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে প্রকল্পগুলো চলছে, সেগুলো সাবেক মেয়রের পরিকল্পনা অনুযায়ী ছিল। এখন আমরা নতুনভাবে করার পরিকল্পনা করছি। এ বিষয়ে সকলের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন: