কুড়িগ্রাম ডিসি অফিসের ৩ সহকারী কমিশনার প্রত্যাহার
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যায়ের তিনজন সহকারী কমিশনারকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার; যারা একজন সাংবাদিককে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেল-জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যায়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন এবং সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে রোববার এই আদেশ হয়। তবে আদেশের বিষয়টি প্রকাশ করা হয় সোমবার।
কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনকেও সরকার প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বলে রোববার সাংবাদিকদের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছিলেন। তবে সে বিষয়ে কোনো আদেশ এখনও হয়নি।
বিসিএস ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা সুলতানা ২০১৮ সালের ৩ মার্চ থেকে কুড়িগ্রাম জেলার ডিসির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কারের পর তিনি নিজের নামানুসারে ওই পুকুরের নাম ‘সুলতানা সরোবর’ রাখতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দশ মাস আগে।
এরপর বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মাদক রাখার অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ওই অভিযান পরিচালনা করেন। গভীর রাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ডিসির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেন অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে এই ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্ব দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে।
খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রোববার জেলা প্রশাসক সুলতানাকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্তের মধ্যে আমরা বেশ অনেকগুলো অনিয়ম দেখেছি। অনেকগুলো অসঙ্গতি পেয়েছি এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেছি। তার (ডিসি) বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিউর অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
রোববার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফুল সাংবাদিকদের বলেন, “হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। শরীরে সেই আঘাতের চিহ্নও আছে।”