April 20, 2024
জাতীয়

নানা নাটকীয়তার পর এরশাদের আসনে সাদই প্রার্থী

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে তার ছেলে রাহগীর আল মাহী সাদকেই (সাদ এরশাদ) প্রার্থী করছে জাতীয় পার্টি। এই উপনির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে বিভেদ থেকে নানা নাটকীয় ঘটনা এবং জাতীয় পার্টি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

কিন্তু শনিবার সমঝোতা বৈঠকের পর রবিবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ১৪ জ্যেষ্ঠ নেতাকে নিয়ে আলোচনা করে দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের বলেন, রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন সাদ এরশাদ।

এরশাদের স্ত্রী ও দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এই আসনে ছেলে সাদকে প্রার্থী করতে চাইলেও তার বিরোধিতা করছিলেন রংপুরের নেতারা। এরশাদের ভাতিজা সাবেক সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের সমর্থকরা সাদের কুশপুতুল পোড়ান।

এর মধ্যে দলের চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে রওশন এবং তার দেবর জি এম কাদেরের দ্ব›দ্ব চরমে উঠে। ফলে এরশাদের আসনে প্রার্থী ঘোষণা আটকে যায়। তবে শনিবার সমঝোতার আভাস দিয়ে এরশাদের ভাই দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী জিএম কাদের বলেন, তারা অন্য দলগুলোর প্রার্থী দেখে তাদের প্রার্থীর নাম জানাবেন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী হিসেবে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু এবং বিএনপি তাদের প্রার্থী হিসেবে জোটভুক্ত দল পিপিবির সভাপতি রিটা রহমানের নাম ঘোষণা করে। এরপর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলেও রবিবার বিকাল পর্যন্ত সাদ এরশাদ তার মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি ‘জানেন না’ বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি এখনও এ মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি জানি না। মনোনয়ন পেলে তো ঠিক আছে। তবে আগে শুনি, তারপর বলতে পারব বিস্তারিত। নানা কাণ্ডে বিতর্কের জন্ম দেওয়া সাদকে বাবা এরশাদ রাজনীতি থেকে সরিয়ে বিদেশে রাখলেও তাকে রাজনীতির ময়দানে নিয়ে আসতে সচেষ্ট ছিলেন মা রওশন।

২০০০ সালে নারীঘটিত এক বিষয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাদ। এরপর তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এরশাদ। এরশাদ অসুস্থ থাকার মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাদকে দেখা যায় জনসম্মুখে। মা রওশনের সঙ্গে বিভিন্ন সভায় আসতে শুরু করেন তিনি। এরশাদের মৃত্যুর পর তিনি আরও সক্রিয়।

দীর্ঘ দিন মালয়েশিয়ার প্রবাস জীবন শেষে সাদ এখন ঢাকাতে থিতু হয়েছেন।  জাতীয় পার্টির দপ্তর বিভাগ জানিয়েছে, সাদ এখন ব্যবসা করেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টি প্রার্থী ঠিক করার জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করতেই তা সংগ্রহ করেন সাদ। তখনই দলটিতে শুরু হয় গৃহবিবাদ।

এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার ছাড়াও ভাগ্নি মেহেজেবেন্নুসা রহমান টুম্পাও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এছাড়াও প্রার্থী হতে চাইছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম মহাসচিব এস এম ইয়াসির।

ইয়াসির মনোনয়নপত্র কেনার সময় এরশাদের ছোট ছেলে শাহতা জারাব এরিককে (বিদিশার সন্তান) সঙ্গে নিয়েছিলেন, যা নিয়ে শুরু হয়েছিল ব্যাপক আলোচনা। সাদের বিরোধিতায় রংপুরের মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সরব হওয়ার পর জি এম কাদেরের পক্ষ ইয়াসিরকে প্রার্থী করতে চাইছিল বলে দলটির কয়েকজন নেতার কাছে শোনা গেছে।

এদিকে সাদকে মনোনয়ন দেওয়ার খবর রংপুরে যেতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা। এস এম ইয়াসির বলেন, এমন সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ভীষণ মর্মাহত। এত দিন ধরে দলকে আমি এত সার্ভিস দিয়ে আসলাম। কিন্তু দল আমাকে মূল্যায়ন করল না।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, আমি যদি নির্বাচন করি, তবে আমি জাতীয় পার্টি থেকে নয়, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করব। জাতীয় পার্টির নাম আমি কোথাও ব্যবহারও করব না। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির কেউ সাদ এরশাদের পক্ষে কাজ করবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

এরশাদের আসনে গত কয়েকবার মহাজোট শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিলেও এবার তারাও প্রার্থী দিচ্ছে, যা লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জের। তবে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল গণি স্বপন জেতার পর থেকে এই আসনটি আর কখনও হাতছাড়া হয়নি তাদের। এই স্বপনের বোন হলেন বিএনপির এবারের প্রার্থী রিটা।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *